ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এবং সেতু-কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে ঢিমেতালে। গত চার বছরে প্রকল্পের মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বারবার তাগাদা দিয়েও অর্থ পাচ্ছে না স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর- এলজিইডি। ফলে বাকি আট মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
২০২০ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত শুকানোর আগেই ওই বছরের মাঝামাঝিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে গ্রামীণ অবকাঠামো বিশেষ করে সড়ক, সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্টের তালিকা করে এলজিইডি।
সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ৫৫ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার সড়ক এবং ৫ হাজার ৩২৪ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও কালভার্ট চিহ্নিত করা হয়। এর পর এগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে ২০২০ সালের নভেম্বরে ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় সরকার, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাও সংস্কার করার কথা। এর মাধ্যমে সারাদেশে সড়ক নেটওয়ার্কিং তৈরি, টেকসই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় কমানো, সময় সাশ্রয়, বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত সহজীকরণের পাশাপাশি গ্রামীণ কর্মসংস্থান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা উদ্দেশ্য হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এলজিইডি। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি থমকে গেছে। সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নাজুক থাকায় লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হলেও অর্থ সংকটে তা হয়নি। পরে সড়ক সংস্কারে গত অর্থবছর থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবছর ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে এলজিইডি। কিন্তু চাহিদামতো এই অর্থও মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, পরপর দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্টের তালিকা করে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখানে ক্ষয়ক্ষতি বেশি, অর্থ বরাদ্দে সেটি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তবে চাহিদার বিপরীতে অর্থ পাচ্ছি না। এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা পেয়েছি। এটি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। সময়মতো অর্থ না পেলে সংকট আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।