গাছ রক্ষার আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে: রিজওয়ানা

0
116
আন্দোলন।

রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের বিভাজকের গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে চলছে আন্দোলন। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, মেয়রকে চিঠি দেওয়া ও প্রতিবাদী গানসহ নানা কর্মসূচির মাঝেই পড়েছে গাছে কোপ। উপায় না দেখে গত কয়েকদিন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন পরিবেশবিদ ও এলাকাবাসী। এত কিছুর পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনও আসেনি কোনো বার্তা। গাছ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরও নির্বিকার। আন্দোলনকারীরা বলছেন, সাতমসজিদ সড়কে শেষ ৩০টি গাছ রক্ষায় তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন।

শিশু, তরুণ থেকে প্রবীণ যত মানুষ প্রতিদিন এই সড়কে যাতায়াত করে, তাদের সবার একই প্রশ্ন ‘গাছ গুলো কেন কাটা হচ্ছে?’ এমনকি সড়কবিভাজক নির্মাণকাজে আসা শ্রমিকেরাও বিষণ্ন ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ তাদের গাছ কাটার কথা বলা হয়নি, রাস্তা ঠিক করার কথা বলা হয়েছিল। ৯ মে রাতে ভেকু মেশিন নিয়ে মালিক আর গাছ কাটবেন না বলে চলে গেছেন।

একটি উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্পের অধীনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এ বছরের জানুয়ারিতে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের সড়কদ্বীপের গাছ কাটা শুরু করে। ৩০ জানুয়ারি বেশ কয়েকটি গাঠ কেটে ফেলার পরে এর প্রতিবাদ জানায় স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা। পরে ৩১ জানুয়ারি এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে এ এলাকার শিশু, শিক্ষার্থী, পরিবেশবাদী, সমাজকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, শিল্পীরা। তখন তারা সড়কে গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছের স্থানে সাত দিনের ভেতর গাছের চারা লাগানোর দাবি জানায়। এর পরে রাস্তার ডিভাইডারের গাছ কাটা স্থগিত রাখে দক্ষিণ সিটি। এ ঘটনার প্রায় তিন মাস পরে এসে ১ মে রাতে আবাহনী মাঠ সংলগ্ন সড়কদ্বীপের গাছগুলো কেটে ট্রাকে নিয়ে সরিয়ে ফেলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। পরে স্থানীয়দের বাধায় গাছ কাটা বন্ধ রাখে তারা। এর পরে দফায় দফায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচির কারণে সিটি করপোরেশন গাছ কাটার জন্য রাতে অন্ধকার বেচে নেয়। গভীর রাতে গাছ কাটা ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে পাহারা বসিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

প্রতি রাতের মতো বুধবার রাতেও পাহারা চলে। রাত সাড়ে ১১টা থেকে সাত মসজিদ সড়কে জড় হন পরিবেশবিদ ও এলাকাসীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। ধানমন্ডি-সাতমসজিদ সড়কে নির্বিচার গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে ‘সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। মেয়র বলছেন আমরা নাকি তথ্য-উপাত্ত ছাড়া আন্দোলন করছি। কিন্তু তিনি কোনো তথ্য জনসাধারণের স্বার্থে প্রকাশ করেননি। আমরা মেয়রের অফিসে গিয়েছিলাম। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তিনি আমাদের এখানে আসেননি। গাছ যাতে কেটে ফেলা না হয় সেজন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা পরিবর্তনও করা হয়। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও লালমাটিয়ায় সে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। গাছ কেটে সড়কের মাঝখানের জায়গা বালি ও কংক্রিট দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এটা কি রকম উন্নয়ন? দূষণমুক্ত বাতাস সেবন আমাদের অধিকার। আমরা আশা করি, মেয়র এ বিষয়ে কথা বলবেন। আমরা এক সপ্তাহ ধরে এত আন্দোলন করছি, নগর ভবনে গিয়েও মেয়রের দেখা পেলাম না। এখন পর্যন্ত তিনি আমাদের একবারও ডাকলেন না। তিনি জনগণের কথা শুনছেন না, বুঝতে চাচ্ছেন না। এটা না শুনলে এই শহর পিচাশের শহরে পরিণত হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.