‘ফেরিওয়ালারা যেমন ঘোরে আর বলে, চুড়ি রাখবেন নাকি ভাই, এ রকম বিদ্যুতের অবস্থা আমাদের হবে। আমাদের ঘুরতে হবে, বিদ্যুৎ রাখবেন নাকি ভাই, বিদ্যুৎ।’ জাতীয় সংসদে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের। সারা দেশ যখন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই বেশ কিছুদিন আগে সংসদে দেওয়া মমতাজের এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। তাঁকে নিয়ে হচ্ছে ট্রলও। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ মমতাজের বাড়ি ঘেরাও করেছেন। এই খবর পৌঁছায় মমতাজের কান পর্যন্ত। তাই গতকাল গভীর রাতে ফেসবুক লাইভে এসে সংসদে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
১২ মিনিট ১২ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের সেই ভিডিওতে মমতাজ বলেন, ‘যখন আমি এমন কথা বলেছিলাম, তখন সত্যি সত্যি আমাদের বিদ্যুতের অবস্থা ভালো ছিল। আমার আসনে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। মানুষ খুশি হয়েছে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য সবারই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে—কীভাবে বিদ্যুতের খরচ কমানো যায়, মোকাবিলা করা যায়। দোষারোপ করে, কাদা–ছোড়াছুড়ি করে কোনো লাভ নেই। আমাদের ক্ষতিই হবে। অশান্তি বাড়বে।’
মমতাজ বলেন, ‘ফেসবুকে হঠাৎ ঢুকেই দেখি, একজন বলছে, মমতাজের বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। কেন? বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না তাই! বলেন, এই যে প্রোপাগান্ডা, এই মিথ্যাচার, আপনাদের বিবেকে কি একটুও নাড়া দিবে না, শুধু শুধু একজন মানুষের বিরুদ্ধে এইভাবে মিথ্যাচার কেন করছি! আপনাদের বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, এই ধরনের প্রোপাগান্ডা থেকে বিরত থাকুন।’
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বলেছেন, ‘সত্যিকার অর্থে এখন গ্রামে গেলে কেউ বলেন না যে আপা, দুইটা মিটার দেন, পাঁচটা মিটার দেন, বিদ্যুৎ লাইন দেন। মিটার দেওয়ার জায়গা তো খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই কিন্তু বাস্তব। আর সেই কথাটাই জাতীয় সংসদে আমি বলেছিলাম। সেটার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ভুলভাবে উপস্থাপন করে অসাধু কিছু লোকজন বাজে কথা ফেসবুক-ইউটিউবে বলার চেষ্টা করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বিনীতভাবে বলব, আপনারা জ্ঞানী মানুষ হয়েও ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, বাজেভাবে উপস্থাপন করছেন। দেখেন, আমার কথা…আমার কথার সত্যতা আছে। আমি সঠিক সময়ে সঠিক কথাই বলেছিলাম। সাময়িক এ সমস্যা (অস্বাভাবিক লোডশেডিং) হবে, এটা আপনি-আমি কেউ জানতাম না।’
গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে সংগীতশিল্পী ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন না করার আহ্বান জানান মমতাজ।
শাবনূর চালাচ্ছিলেন গাড়ি, মমতাজ গাইছিলেন গান
মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় আগে ৩০ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ ছিল। আমি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনকালে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। একসময় এলাকায় গেলে গ্রামের মা-বোনেরা এসে বলতেন, “আপা, কিছু চাই না। আমাদের বিদ্যুতের লাইন দেন, মিটার দেন। মিটারের অভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।” এই যে একটা সংকট ছিল তখন, সেটা কিন্তু আমরা সমাধান করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ তখন খুশি হয়েছিল। সে জন্য সংসদে বলেছিলাম, মানুষ বিদ্যুৎ চাইত, একসময় এই চাওয়ার ব্যাপারটা আর থাকবে না। সরকার যেভাবে বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে, উৎপাদন করছে, ঘরে ঘরে মিটার পৌঁছে দিচ্ছে।’
মানিকগঞ্জে ফুটবল খেলছেন মমতাজ
ফেসবুক লাইভের শুরুতেই নিজের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন তুলে ধরেন মমতাজ। এরপর সম্প্রতি দেশজুড়ে অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের পর জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছিলেন, তা নিয়ে ‘ট্রল’ না করে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।মমতাজ বলেন, ‘আজকে যে কথা বলার জন্য লাইভে এসেছি, সাময়িক একটা কষ্টের মধ্যে সারা দেশের মানুষ পড়েছি, সেটা হলো বিদ্যুৎ। এ বিদ্যুৎ নিয়ে যেমন কষ্ট আছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে নানা ধরনের কথা, আলোচনা-সমালোচনা ও প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। যেহেতু আমি এমপি, কাজ করতে হলে আমি আমার এলাকায় কী কী কাজ করেছি, কী কাজ করা বাকি আছে, সেগুলো বলার একটি জায়গা হলো সংসদ। সংসদে আমি অনেক বক্তব্য দিই। তার দু-একটি কথা ধরে অনেকেই সমালোচনার ঝড় তুলেছেন এই কষ্টের মধ্যে। কারণ, বিদ্যুৎ থাকছে না, বিদ্যুতের কষ্টটা সবাই পাচ্ছি আমরা। সেটা কমবেশি সবার ঘরেই কিন্তু আজকে এ সমস্যাটা আছে।’
নান্টু ঘটক, না মরার কোকিলে- কোনটি বেছে নিলেন মমতাজ
‘এটা সাময়িক সমস্যা। আপনারা জানেন যে বিশ্বের কী অবস্থা। কিছুদিন আগে করোনা মহামারি গেল। তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের অনেক ধরনের ক্ষতির মধ্যে, সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। বড় বড় দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ তো ছোট্ট একটা দেশ। সেখানে সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি। তারপরও আমাদের এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলব, সেটা যেন আমরা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। আমাদের সৃষ্টিকর্তা আছেন, আল্লাহর কাছে একটু পানাহ চাইতে পারি।’
আওয়ামী লীগের এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘সরকার কিন্তু চেষ্টা করছে। আপনারা জানেন, গতকালও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। সংসদে আলোচনা হচ্ছে। যে সমস্যাটা এ মুহূর্তে আমাদের আছে, এটা সাময়িক। সরকার চেষ্টা করছে সাময়িক এ সমস্যা কাটিয়ে আমরা যেন ভবিষ্যতে বিদ্যুতের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারি। হ্যাঁ, আমি কেন বলেছিলাম সংসদে, আপনারা জানেন, এটা তো মিথ্যা কথা নয় যে বিদ্যুৎ যে হারে সরকার উৎপাদন করেছে, ঘরে ঘরে লাইন দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে সরকার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই প্রশংসা আমিও করেছি।’