গত অর্থবছরে এশিয়ায় রেকর্ড অর্থায়ন আইএফসির

0
171

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু প্রকল্প, অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ (এমএসএমই) এবং নারী ও কৃষকরা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের ((আইএফসি) রেকর্ড অর্থায়ন থেকে উপকৃত হয়েছে। এসব তহবিল জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ বৈষম্য, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা এ অঞ্চলে দারিদ্র্য কমাবে এবং সমৃদ্ধি বাড়াবে।

বুধবার বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান আইএফসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উদীয়মান বাজারগুলোর বেসরকারি খাতে নিবেদিত বৃহত্তম বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আইএফসি জুনে সমাপ্ত গত অর্থবছরে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে ১০৮টি প্রকল্পে রেকর্ড এক হাজার ১০০ কোটি ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রয়েছে আইএফসির নিজস্ব হিসাব থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ৩৪০ কোটি ডলার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং বাণিজ্য প্রবাহ সহজ করতে ২৯০ কোটি ডলার স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্য ও সাপ্লাই চেইন অর্থায়ন।

আইএফসির নিজস্ব হিসাব থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রতিশ্রুতির ৩৯ শতাংশ এমন সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রে প্লাস্টিক দুষণ মোকাবেলায় সহায়তা করবে, যা এই অঞ্চলের অনেক দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এবং প্লাষ্টিক দূষণে মূখ্য ভূমিকা রাখছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সংকট একত্রিত হয়ে এরই মধ্যে এ অঞ্চলের খাদ্য ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে, যা লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং কয়েক বছরের উন্নয়ন অর্জন মুছে ফেলেছে। এ অবস্থায় আইএফসি এ অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতির প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে একটি টেকসই চালের বাজার উৎসাহিত করা। নতুন গঠিত গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এটি আইএফসির প্রথম বিনিয়োগ। খাদ্য সংকট সামাল দিতে ৬০০ কোটি ডলারের এই বৈশ্বিক সহায়তা কার্য্রক্রম চালু হয়েছে। গত বছর এ অঞ্চলে নেওয়া আইএফসির প্রকল্পগুলো নারী কৃষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসহ এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আইএফসি জানায়, এ অঞ্চলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রেকর্ড ৪৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন ব্যবসার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসহ ১৬ লাখের বেশি সংখ্যক ঋণের ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে এমএসএমইতে অর্থায়ন  সহজ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এমএসএমইগুলো এ অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, যার আওতায় রয়েছে মোট ব্যবসা-বাণিজ্যের ৯৭ শতাংশের বেশি এবং শ্রমশক্তির অর্ধেকেরও বেশি নিয়োজিত। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইএফসির বিনিয়োগ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বীমা গ্রহণের সুযোগ বাড়াতেও সহায়তা করেছে। অন্যান্য প্রকল্প সাশ্রয়ী বাসস্থানের জন্য পাঁচ লাখেরও বেশি সংখ্যক ঋণ সরবরাহ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত আইএফসির আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো পুলিতি বলেন, বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাণবন্ত বেসরকারি খাত এই অঞ্চলের বৃহত্তম উন্নয়ন ইস্যুগুলো মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে কানেকটিভিটি বা সংযোগ এবং অন্তর্ভুক্তির চালিকাশক্তি হলো ডিজিটাইজেশন, যা গত বছর আইএফসির বিনিয়োগে গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে অত্যাধুনিক সাবমেরিন কেবল সিষ্টেমের মাধ্যমে বৈশ্বিক ইন্টারনেট সুপারহাইওয়েতে সংযোগে সহায়তা করতে মালদ্বীপে বিনিয়োগ প্রকল্প, ইন্দোনেশিয়াতে এমএসএমইর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সোশ্যাল কমার্স স্টার্টআপ প্রকল্প এবং জাতীয় ডিজিটাল পেমেন্ট সিষ্টেমস তৈরিতে ফিজি, সামোয়া এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সরকারগুলোকে পরামর্শ দেওয়ার প্রকল্প রয়েছে। এ অঞ্চলে নেওয়া আইএফসির অন্যান্য প্রকল্প ইন্দোনেশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং ফিজিতে শিশু পরিচর্যা পরিস্থিতির উন্নতি করবে, কম্বোডিয়ায় লজিষ্টিকস অবকাঠামো সুবিধা বাড়াবে এবং তিনটি স্থানীয় ব্যাংকে ক্রস–কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.