কংগ্রেস ঘায়েলে মোদির ইসলামপন্থি ট্যাগ

0
85
নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ শুরু করেছে। সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা শেষে তারা নির্বাচনী প্রচারের কৌশলে এনেছে পরিবর্তন।

জনসভায় দেওয়া ভাষণে মোদি বলেছেন, বিরোধী দল কংগ্রেস সংখ্যালঘু মুসলমানদের পক্ষপাতী। এই নিয়ে দেশটিতে বয়ে যাচ্ছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা মোদির এমন সাম্প্রদায়িক বক্তব্যেক বিজেপির কট্টরপন্থি ভিত্তি শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে প্রত্যাশিত ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়ায় ভোটার সংখ্যা বাড়াতে সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে ধর্মীয় বিষয় টেনে এনেছেন বলেও মনে করেন তারা। খবর রয়টার্সের।

গত ১৯ এপ্রিল শুরু হওয়া ভোটের মাধ্যমে মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে চান। আর এ লক্ষ্যে বিরামহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এসব নির্বাচনী প্রচারে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পাশাপাশি কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও।

কিন্তু গত রোববার কর্ণাটকে দেওয়া বক্তব্যে মোদি মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে সরাসরি আঘাত করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নির্বাচনী পরিকল্পনা হলো– তারা মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুদের সম্পদ ভাগ করে দেবে।

অবশ্য, কংগ্রেস এই ধরনের কোনো ভাগবাটোয়ারার কথা অস্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে এমন বক্তব্য দেওয়ায় মোদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে দলটি।

ভোটের আগে করা সমীক্ষা বলছে, মোদির বিজেপি এই নির্বাচনে  সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, তাঁর দল সম্ভাব্য ভোটার টানতে এবং জয়ী হওয়ার বাড়তি আত্মবিশ্বাস এড়িয়ে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এ জন্যই এমন বক্তব্য দিয়েছেন মোদি।

দিল্লির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিলাল আহমেদ বলেছেন, বিতর্কিত মন্তব্যগুলো মোদির স্বাভাবিক বিষয় নয়। এটি তাঁর অস্বাভাবিক ‘বিচ্যুতি’। কারণ তিনি সরাসরি মুসলমানদের টার্গেট করে খুব একটা কথা বলেন না।

২০১৯ সালে বিজেপি ভালো ভোট পেয়েছে– এমন এলাকায়ও এবার তারা কম ভোট পেয়েছ। হিলাল বলেন, ‘কম ভোটার উপস্থিতির অর্থ হলো– প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিজেপি ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। দলটি চায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভোটার বেরিয়ে আসুক। এটাই মূলত মোদির এই বিচ্যুতির কারণ।’

মোদির ওই বক্তব্য এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপির সাধারণ কর্মী-সমর্থক ছাড়াও এটি প্রচার করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

ভারতে থাকা ২০ কোটি মুসলমানকে নানা সময় টার্গেট ও বৈষম্যের জন্য মোদি সরকার বারবারই অভিযুক্ত হয়েছে। অবশ্য, সরকার সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মোদি বলেছেন, তিনি সবার উন্নতির জন্যই কাজ করছেন।

কিন্তু মোদির এই সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের বিষয়ে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা  বলেন, বিজেপি তার উন্নয়নের স্লোগানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুসলিম নারী ও এই সম্প্রদায়ের দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য মোদি সরকার সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে।

আরেক সিনিয়র বিজেপি নেতা এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী প্যানেলের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কংগ্রেস ও তার জোটসঙ্গীদের নেওয়া ‘মুসলিম অগ্রাধিকার কৌশল’ সম্পর্কে ভোটারদের মনে করিয়ে দিয়েছেন মোদি। এর বেশি কিছু নয়।

বিশ্লেষক হিলালের মতে, ‘প্রথম পর্বের ভোটার উপস্থিতি কম দেখে বিজেপি বুঝতে পেরেছিল, তাদের নিজস্ব ভোটারদের কাছে ফিরে যেতে হবে। মূল বিষয়গুলোতে ফিরে যেতে হবে। এ জন্যই মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত মন্তব্য ভাষণে এসেছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.