আরও নিশ্চিত হতে নেইমারকে নিয়ে আরও কয়েকটি প্রশ্ন হলো। তার একটি এ রকম—নকআউট পর্বের ম্যাচ। খেলা অতিরিক্ত সময়ে যেতে পারে। তাহলে ১২০ মিনিট। পারবেন নেইমার? এরপর যদি পেনাল্টি শুটআউট হয়, সেখানেও তো তাঁকে লাগবে। নেইমারকে কি তাহলে শুরু থেকে খেলানোটা ঠিক হবে?
তিতে কোনো ধোঁয়াশা রাখলেন না। জানিয়ে দিলেন, ‘আমি শুরু থেকেই সেরা দল নামাতে চাই।’ সেই সেরা দল না নামিয়ে শেষ গ্রুপ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হেরে বসেছে ব্রাজিল। যে পরাজয় বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের অপরাজেয় জয়যাত্রা ১৭ ম্যাচেই থামিয়ে দিয়েছে বটে, তবে বড় কোনো তাৎপর্য নিয়ে দেখা দেয়নি। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিলই।
তাতে কি, যত গুরুত্বহীন ম্যাচই হোক, ব্রাজিল হারবে কেন? তা-ও আবার ক্যামেরুনের কাছে! এ নিয়ে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে যথারীতি তোলপাড়। যেটির রেশ টের পাওয়া গেল ব্রাজিলের সংবাদ সম্মেলনেও। থিয়াগো সিলভা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেন, বৃহত্তর স্বার্থে একটা ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল। তা ঠিকই ছিল। হেরে গেলেও ব্রাজিলের প্রায় নতুন দলটা তো মোটেই খারাপ খেলেনি। একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে জিততেও পারত। তা ছাড়া এই হারে কিছু আসে যাচ্ছেও না। গ্রুপে কী হয়েছিল না হয়েছিল, নকআউট পর্বে তার কোনো মূল্য আছে নাকি!
কিন্তু ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকেরা তা শুনলে তো! ক্যামেরুনের বিপক্ষে পরাজয় নিয়ে প্রশ্ন হতেই থাকল। হয়তো তা থামাতেই এর একটা ইতিবাচক দিকও সবাইকে ধরিয়ে দিতে চাইলেন থিয়াগো সিলভা। ওই ম্যাচে বিশ্রাম পেয়ে ব্রাজিলের প্রথম পছন্দের একাদশের সবাই এখন খুব তরতাজা। দক্ষিণ কোরিয়া যেখানে ব্রাজিলের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্ত থাকবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পর্তুগিজ কোচ পাওলো বেন্তো যা মেনে নিচ্ছেন। পর্তুগালের বিপক্ষে অমন একটা স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রাজিলের মতো প্রবল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে তিনি একটু চিন্তিতও। ঘানার বিপক্ষে ম্যাচের অন্তিম লগ্নে লাল কার্ড দেখায় নিজের দেশ পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে ডাগআউটে থাকতে পারেননি বেন্তো। শেষ ষোলোতে উঠতে সেই ম্যাচে জিততেই হতো দক্ষিণ কোরিয়াকে। ব্রাজিলের মতো বিলাসিতা দেখানোর সুযোগ তাঁদের ছিল না।
এর মধ্যে আবার নেইমার ফিরছেন। বেন্তো হাসতে হাসতে বললেন, ‘যদি আমি বলি, নেইমার ছাড়া ব্রাজিলের চেয়ে নেইমারসহ ব্রাজিলের সঙ্গে খেলতে আমার ভালো লাগবে, তাহলে তা ভণ্ডামি হবে।’ প্রতিপক্ষ কোনো কোচেরই তা ভালো লাগার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে বেন্তোর মনে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচের স্মৃতি যেখানে বলতে গেলে টাটকাই। বিশ্বকাপে তো নয়ই, কোনো টুর্নামেন্টেই ব্রাজিল আর দক্ষিণ কোরিয়ার দেখা হয়নি আগে। এর আগে যে সাতটি ম্যাচ হয়েছে, সব কটিই প্রীতি ম্যাচ। গত জুনে যার সর্বশেষটিতে ব্রাজিল জিতেছে ৫-১ গোলে। নেইমার গোল করেছেন ২টি।
নেইমারকে ফিরে পাওয়াটা যেকোনো সময়ই ব্রাজিলের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এখন আরও বেশি। চোট-অসুস্থতা মিলিয়ে রীতিমতো গুমোট হয়ে আছে ব্রাজিল শিবির। ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচটা পরাজয়ের চেয়েও বড় দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। দুঃসংবাদ একটা নয়, দুটি। গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও অ্যালেক্স তেলেস চোট পেয়ে ছিটকে পড়েছেন বিশ্বকাপ থেকেই। জেসুসকে নিয়ে আবার দেখা দিয়েছে বিতর্ক। আর্সেনালে খেলার সময়ই নাকি ব্যথা ছিল তাঁর। জেনেশুনেই আনফিট জেসুসকে বিশ্বকাপের দলে নিয়েছেন তিতে।
এমনিতে শান্ত, ধীরস্থির তিতে এ নিয়ে মহাক্ষিপ্ত। সংবাদ সম্মেলনে সেই ক্ষোভের প্রকাশও ঘটালেন। যারা এমন খবর ছড়াচ্ছে, তারা মিথ্যাবাদী, ব্রাজিল দলের ভালো চায় না। এসব ‘ফেক নিউজ’ কতটা ক্ষতিকর, রাগতস্বরে সেটাও বললেন, ‘একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই, একটা ম্যাচ জয়ের জন্য আমরা কখনোই কোনো খেলোয়াড়কে ঝুঁকিতে ফেলব না। এই যে নেইমারের খেলা না-খেলা, এ ব্যাপারেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আমাদের মেডিকেল টিম।’
নেইমারের মতোই সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন দানিলো। তিনিও এখন সুস্থ। জেসুস আর তেলেসকে হারানোর ব্যথা নেইমার আর দানিলোকে ফিরে পেয়ে হয়তো একটু কমবে। বিশেষ করে ‘আসল বিশ্বকাপ’-এর শুরুতেই নেইমারকে পাচ্ছেন ভেবে বাকি সব ভুলে যেতেই পারেন তিতে।