সাংবাদিককে তথ্য দিলে জেল!

বিএসইসির কর্মকর্তাদের প্রতি সতর্কবার্তা

0
134
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)

সাংবাদিকের কাছে তথ্য দিলে চাকরিচ্যুতিসহ জেল-জরিমানার ভয় দেখালেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত বুধবার দুপুরে বিএসইসির আগারগাঁও কার্যালয়ের মাল্টিপারপাস হলে সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সমকালের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, ওই সভায় সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। অফিসে নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সময়মতো উপস্থিত থাকার কথা কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। তবে মূল বক্তব্য ছিল কোনোভাবেই যাতে তথ্য পাচার না হয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে বলেও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতি, শেয়ার কারসাজির বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশের সঙ্গে এ সভার সংযোগ আছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

জানা গেছে, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমের বক্তব্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এরপর বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, কমিশনার মো. আব্দুল হালিম, কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, জাপানের ব্যবসায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্লাশমব’ বিষয়ে কর্মকর্তাদের অবহিত করতে বৈঠকটি হয়। এর বাইরে অফিস শৃঙ্খলার বিষয়টি যথাযথভাবে মেনে চলার বিষয়ে কর্মকর্তাদের সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে তথ্যের গুরুত্ব ও গোপনীয়তা রক্ষার আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই।

সাংবাদিকদের তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল কিনা, জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, সচেতন করা হয়েছে সব কিছ নিয়ে। কমিশনের কাছে অনেক গোপন তথ্য থাকে। ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশের গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা বিষয়ে ১৯ ধারায় বলা হয়েছে। ওই ধারাটি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ধারায় বর্তমান ও সাবেক এমএলএসএস থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত কর্মকর্তাদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বর্তমান কমিশন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য গণমাধ্যমকে দিচ্ছে।

তবে কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অফিস শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি সভায় বলা হয়েছে ঠিকই, তবে ঘুরেফিরে মূল কথা ছিল সাংবাদিকদের তথ্য না দিতে সতর্ক করার বিষয়টি। বলা হয়েছে, প্রমাণ পেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। প্রমাণ পেলে প্রথমত চাকরিচ্যুত হবেন। এরপর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে জেল-জরিমানা উভয়ই হতে পারে।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এটা প্রচ্ছন্ন হুমকির মতো ছিল। কমিশনের সব কর্মকর্তা ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশের গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা বিষয়ে ১৯ ধারা বিষয়ে জানেন। ঘটা করে এটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কিছু ছিল না। প্রায় এক ঘণ্টার সভায় পাঁচ বক্তার সবাই এই একই কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, এটা ঠিক ১৯৬৯ সালের এসইসি অধ্যাদেশের ১৯ ধারায় তথ্যে গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। তবে এ গোপনীয়তা কারও দুর্নীতি বা অনিয়মের সুরক্ষার জন্য নয়। এ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশনের অনুমতি ছাড়া কেউ (কমিশন কর্মকর্তারা বা কর্মচারী) কাজের সূত্রে পাওয়া এমন কোনো তথ্য কোনো ব্যক্তির কাছে যোগাযোগ বা সরবরাহ করবেন না, যা তাঁর পাওয়ার আইনগত অধিকার নেই। ১৯(বি)(১) উপধারায় সুস্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা এমন তথ্য যদি প্রকাশ করেন, যা ব্যবহার করে কেউ শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে লাভবান হয়, তবে তা ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অপরাধ বলে গণ্য হবে।

অর্থাৎ কমিশনের এই আইনের এমন তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা হয়েছে, যা কোনো শেয়ারের দরকে প্রভাবিত করতে পারে বা ওই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করে কেউ শেয়ার কেনাবেচা করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভবান হতে বা কাউকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে- এমন তথ্য ফাঁস বা পাচার করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, সভায় বলা হয়েছে সরকার বিব্রত হয় এমন তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে কাজ করছে বলেও কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নিজ অফিসের অন্য কোনো সহকর্মীকে হয়তো অপছন্দ করেন, তাঁকে ফাঁসাতে কোনো তথ্য সাংবাদিকদের দেবেন না। কারা কারা তথ্য দিচ্ছেন, তাঁরা সতর্ক হন। প্রমাণ পেলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে কমিশনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.