আবারও কাঠ পুড়িয়ে কয়লা

0
135
কয়লা তৈরির জন্য চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। গত শনিবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জীবনপুর গ্রামে

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জীবনপুর গ্রামে বসতি এলাকায় কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে।

তিন মাস বন্ধ থাকার পর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গাছের গুঁড়ি ও কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি শুরু হয়েছে। কয়েক দিন ধরে আবারও চারটি চুল্লিতে কয়লা তৈরির এই অবৈধ কার্যক্রম চলছে। এতে চুল্লি থেকে বের হওয়া ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আশপাশের মানুষ।

উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামে বসতি এলাকায় পাশাপাশি তিনটি কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল। প্রতিটি কারখানায় ছয়-সাতটি চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো হতো। এ নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘লোকালয়ে কয়লার কারখানা: কালো ধোঁয়ায় ধুঁকছে মানুষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রশাসন অভিযান চালিয়ে এসব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর জীবনপুর গ্রামের খোকন মিয়া পুনরায় তাঁর কারখানাটি চালু করেছেন। সেখানে চারটি চুল্লিতে কাঠ ও গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কে খোকন মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘তিন মাস আগে ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কাঠ ও খড়ি বিক্রেতারা আমার কাছে অনেক টাকা পান। সেই টাকা পরিশোধ করতে চারটি চুল্লি চালু করেছি। টাকা উঠলে আবার কারখানা বন্ধ করে দেব।’

গত শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চুল্লিতে আগুন জ্বলছে। ইট দিয়ে চুল্লি বানিয়ে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। চুল্লিতে গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। চুল্লির চারদিকে রাখা গাছের গুঁড়ি ও শুকনা কাঠখড়ি। প্রচুর কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। একপাশে চুল্লির মুখ খোলা। সেদিক দিয়ে গাছের গুঁড়ি ও খড়ি দেওয়া হয়। খোলা মুখে আগুন দিয়ে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা খুলনা থেকে এসেছেন। প্রতিটি চুল্লিতে ১৫০ মণ গাছের গুঁড়ি দিয়ে ভরাট করে আগুন দেওয়া হয়। প্রতি মণ খড়ির দাম ১৩০ টাকা। এক মণ খড়ি পুড়িয়ে পাঁচ-ছয় কেজি কয়লা পাওয়া যায়। ৮-১০ দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতি মণ কয়লার দাম ৮০০ টাকা।

এসব কয়লা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসব কয়লা প্রধানত ব্যাটারি, মশার কয়েল, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ও সিসা তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়। অনেক কারখানার প্রতিনিধিরা এসে কয়লা নিয়ে যান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধোঁয়ার কারণে শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুদের ঘরের বাইরে নেওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জীবনপুর গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কয়লা তৈরির কারখানা বসানো হয়েছে। এখানে অবৈধভাবে কয়লা তৈরি হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান বলেন, কয়লা তৈরির চুল্লির কারণে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, গত বছর নভেম্বরে পলাশবাড়ীতে এবং এ বছর গোবিন্দগঞ্জে এ ধরনের কয়েকটি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কয়লা তৈরির অবৈধ কারখানাটি দ্রুত গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.