৭৪% ছোট উদ্যোক্তা দুর্নীতির শিকার

0
285
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গতকাল সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই মনে করেন, এই খাতে ‘ব্যাপক দুর্নীতি’ আছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সালেহ জহুর। এতে বলা হয়, দেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই মনে করেন যে এই খাতে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ৭৪ শতাংশ জানান যে তাঁরা দুর্নীতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সালেহ জহুর বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে ৭৮ শতাংশ ব্যবসায়ীকে নানা সময়ে ঘুষ দিতে হয়েছে। ৬০ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাব ও ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। পুরো ব্যবস্থায় গলদের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) ৪৪ শতাংশ ব্যবসায়ী স্বজনপ্রীতি ও ৪৩ শতাংশ অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তাঁদের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান।

অনুষ্ঠানে যৌথ প্রস্তাবনা উপস্থাপনকালে বলা হয়, দুই বছর গবেষণার পরেও এ খাতের দুর্নীতির পুরো চিত্র উঠে আসেনি। তবে একটি ধারণা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, এসএমই উদ্যোক্তারা সব কাজে একধরনের পক্ষপাতের মুখোমুখি হন। যেমন বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগ নিতে খুব ঝামেলা পোহাতে না হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের সংযোগ নিতে অর্থের লেনদেন করতে হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার বড় শক্তি হচ্ছে, এসএমই খাত। এ খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। ক্রিয়াশীল ব্যবসায় সংগঠনগুলো সেটি করতে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন মঞ্চ তৈরি করে কাজটা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই গবেষক।

বাংলাদেশে দুর্নীতি কমানো গেলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে উল্লেখ করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি দুর্নীতির লাগাম টানা যায়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। তাতে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অপরাধ ও অর্থ পাচারের মতো বিষয় অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। এ দেশের জনগণ ও সরকারকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।’

পিটার ডি হাস আরও বলেন, বৈশ্বিকভাবে যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। এ জন্য দুর্নীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনে দেশের গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

সম্মেলনের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দেশে আইন আছে কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অকার্যকর হয়ে আছে। সাংবিধানিক অন্য সংস্থাগুলোও সেভাবে কাজ করছে না। তাতে দুর্নীতি আরও জেঁকে বসছে বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত অনেক জটিলতা এখনো বিদ্যমান। ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করার পরেও এগুলোর কতটুকু সমাধান সম্ভব তা নিয়েও সংশয় আছে। কারণ, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দুর্নীতি কমানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

দেশের উন্নতির সঙ্গে অসমতাও বাড়ছে উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতি কমানোর জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

অটোমেশনের মতো কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতার আরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বেসরকারি উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু উইলসন, সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.