৪০তম বিসিএসের নন–ক্যাডারের নিয়োগ নিয়ে সরকারের চূড়ান্ত মতামতের অপেক্ষায় আছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই বিসিএসে নন–ক্যাডারে কত জনকে নেওয়া হবে, এ সিদ্ধান্ত এলেই সে অনুসারে ব্যবস্থা নেবে পিএসসি।
তবে পিএসসির উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন ৪০তম বিসিএসের নন–ক্যাডার থেকে কমপক্ষে চার হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পেতে পারেন। তবে এই সংখ্যা বাড়তেও পারে। সে সিদ্ধান্ত একান্ত সরকারের।
জানতে চাইলে পিএসসির একটি সূত্র বলেছে, ‘আমরা জনপ্রশাসনের পাস করা বিধি পেয়েছি। সেটি মতামত প্রদানের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমরা মতামত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন সেখান থেকে পাস হয়ে জনপ্রশাসনে এলেই সংশোধিত বিধিমালা বাস্তবায়ন করবে পিএসসি।’
ওই সূত্র আরও জানায়, কমপক্ষে চার হাজার কর্মকর্তা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে, এই সংখ্যা বাড়তেও পারে। কতজনকে নেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ের। সেখান থেকে যেভাবে নিয়োগ দিতে বলা হবে, পিএসসি সেভাবেই তা বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে পিএসসির আরেকটি সূত্র বলেছে, ৪০তম বিসিএসের নন–ক্যাডারের বিষয়ে তাঁরা সব ধরনের কাজ শেষ করেছেন। বেশ কয়েকটি সভাও হয়েছে। সেসব সভায় নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা আছে। এ বিষয়ে টেলিটকের সঙ্গে সভা হয়েছে। বিধি পাস হয়ে এলেই যাতে দ্রুত নন–ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায়, তার সব প্রস্তুতি পিএসসি নিয়ে রেখেছে বলেও জানায় ওই সূত্র।
৪৫তম বিসিএস মে মাসে নেওয়ার পরিকল্পনা পিএসসির
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সচিব কমিটির পাস করা নন-ক্যাডার নিয়োগের সংশোধিত বিধিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) এসেছিল। এখন বিধিটির বিষয়ে পিএসসি মতামত দিয়েছে। এরপর এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হলে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নন-ক্যাডার বিধি সচিব কমিটি পাস করেছে। এটির বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন মতামত দিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেখান থেকেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।
৪৩তম বিসিএসের ফল কবে, জানাল পিএসসি
এদিকে এক বছরের বেশি সময়েও বিধি আটকে থাকার কারণে নিয়োগ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা। ৪০তম বিসিএসের একাধিক নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থী জানান, ‘আমাদের অনেক দিন ধরে নন-ক্যাডারের তালিকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এই সময়ে আগের সব বিসিএসে নন-ক্যাডারের তালিকা প্রকাশ করা হলেও তাঁদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তালিকা প্রকাশের পরও অনেক সময় লাগে নিয়োগ হতে। এটাও মাথায় রাখতে হবে সরকারকে। বেকার জীবনে একটি চাকরি যে কত জরুরি, সেটা কেবল তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হচ্ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হতো। সেখান থেকে পাঠানো পদের চাহিদা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো। নতুন আরেকটি বিসিএসের ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত শূন্য পদের চাহিদা এলে পিএসসি অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের সুপারিশ করত।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোনো বিসিএসের সময় কত শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
গত বছরের ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।
৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ আগের নিয়মেই দেওয়ার দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থী ব্যক্তিরা। তাঁরা ছয় দফা দাবি নিয়ে পিএসসির সামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছিলেন।