৩১ জুলাই, ২০২৪: ‘মার্চ ফর জাস্টিস’

0
22

৩১ জুলাই, ২০২৪। ততোদিনে আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কারে সীমাবদ্ধ নেই। রক্ত ঝরলো কেন- সেই জবাব চাইতে এদিন শুরু হয় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। কারফিউ ভেঙে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন সারাদেশের আইনজীবীরাও।

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ৩১ তারিখ বেলা ১২টার দিকে দোয়েল চত্বরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে যুক্ত হয় বুয়েটের তরুণরাও। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই হাইকোর্ট অভিমুখে যেতে থাকে মানুষের স্রোত। এসময় আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গনেও তখন শুরু আইনজীবীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। মিছিল নিয়ে বের হতে চাইলে পুলিশের সাথে হয় ধ্বস্তাধস্তি। ততোক্ষণে শিক্ষার্থীরাও এসে যোগ দেন আইনজীবীদের সাথে। এদিন জাতি দেখেছিল, শিক্ষার্থীদের প্রতি আইনজীবীদের অকুণ্ঠ সমর্থন। পুলিশের কাছে নিজেদের জিম্মি করে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তারা।

কারফিউর শেকল ভাঙা হচ্ছিলো গোটা দেশজুড়েই। রাস্তায় নামেন সারাদেশের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-আইনজীবী আর নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। চট্টগ্রামে আইনজীবীদের সহায়তায় আদালত প্রাঙ্গনে চলে আন্দোলন। রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ সারাদেশের পরিস্থিতিই সেদিন এক। কোনো চোখ রাঙানিতে আর কাজ হয়নি সেদিন।

এদিকে, বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়, হাইকোর্ট বেঞ্চের এক বিচারপতি অসুস্থ, তাই হবে না শুনানি।

অন্যদিকে, পরিস্থিতি বুঝে বর্তমান-সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের একত্রিত করার চেষ্টা করছিলেন ওবায়দুল কাদের। তবে দাবার গুটি উল্টে যায়, নিজ দলের সাবেক নেতাদের কাছেই তাকে হতে হয় হেনস্তা। সাবেক নেতাদের ‘ভুয়াধ্বনির’ মুখে কোনোরকমে ঘটনাস্থল ছাড়েন সাবেক এই মন্ত্রী।

এদিন গোয়েন্দা বিভাগ থেকে ডিবি হারুণকে বদলি করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর এদিন থেকেই ঢাকার সবগুলো থানার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে চলে আসে তার হাতে।

সমন্বয়করা বলছেন, ততোদিনে ভেতরে ভেতরে তৈরি হয়েছে ‘বিদ্রোহী ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগের অনেকে দলীয় বিভিন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক করতেন আন্দোলনকারীদের। অনেক ছাত্রলীগ নেতা এসময় পদত্যাগও করেন।

সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, সবাইতো আসলে মন থেকে ছাত্রলীগ করেনি। ছাত্রলীগের যেসব সদস্য মন থেকে সাপোর্ট করতো না, তাদেরকে আমরা আন্দোলনে যুক্ত করেছি।

জুলাইয়ের শেষ দিনে স্পষ্ট হয়ে যায়, আন্দোলন এখন আর কেবল শিক্ষার্থীদের মাঝে বা কোটার দাবিতে সীমাবদ্ধ নেই্। জনমানুষ ততোদিনে বিক্ষুব্ধ—সবার দাবি, হত্যার বিচার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.