৩ বলে দরকার ৪, হাতে ৯ উইকেট, এরপর শবনিমের হ্যাটট্রিকে ছারখার ফিনিক্স

0
169
দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছেন শবনিম ইসমাইলদ্য হানড্রেড ওয়েবসাইট

‘আমাকে নির্ভার থাকতে হতো, অধিনায়ককেও তা–ই। তাকে বলেছিলাম, “আমরাই জিতব, চিন্তা করো না। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”’

শবনিম ইসমাইলের অমন কথা শুনে ট্যামি বেমন্ট কতটা নির্ভার থাকতে পেরেছিলেন কে জানে! শেষ ৫ বলে বার্মিংহাম ফিনিক্সের প্রয়োজন ছিল ৯ রান, তবে বাকি ছিল ৯ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে এসে যদি কোনো বোলার বলেন যে ম্যাচটা তিনি জিতিয়ে দেবেন, তাতে অধিনায়ক কতটুকুই–বা নির্ভার থাকতে পারেন!

শবনিম অবশ্য কথা রেখেছেন। শেষ ৩ বলে হ্যাটট্রিক করে দ্য হানড্রেডে মেয়েদের প্রতিযোগিতায় ওয়েলশ ফায়ারকে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার এনে দিয়েছেন অবিশ্বাস্য এক জয়। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া এ টুর্নামেন্টে মাত্র তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন শবনিম—স্বদেশি ইমরান তাহির ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যালানা কিংয়ের পর।

১৩৮ রানের লক্ষ্যে গতকাল এজবাস্টনে ব্যাটিং করছিল বার্মিংহাম ফিনিক্স। জিততে গেলে মেয়েদের হানড্রেডের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে হতো তাদের। সোফি ডিভাইনের ১৯ বলে ২৯ রানের পর টেস ফ্লিনটফ ও অ্যামি জোন্সের ৬৭ বলে ৯৩ রানের জুটিতে প্রায় নিশ্চিত জয়ের পথেই এগোচ্ছিল স্বাগতিকেরা।

হ্যাটট্রিকের পর শবনিম
হ্যাটট্রিকের পর শবনিমদ্য হানড্রেড টুইটার

শেষ ৫ বলের সেটে বার্মিংহামের প্রয়োজন ছিল ৯ রান। প্রথম বলে জোন্স সিঙ্গেল নিয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় বলে চার মারেন ফ্লিনটফ, অর্থাৎ শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪ রান। এখনকার সময়ে নারী ক্রিকেটে অন্যতম দ্রুতগতির বোলার শবনিমের জবাব দিতে সময় লাগেনি, তৃতীয় বলেই বোল্ড করেন ফ্লিনটফকে।

চাপ বাড়লেও তখন পর্যন্ত ফেবারিট ছিল বার্মিংহামই। কিন্তু পরের বলেই শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন এরিন বার্নস। শেষ বলে গিয়ে ম্যাচ ঘুরে যায় ওয়েলশের দিকে। হ্যাটট্রিক বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে যান ইসি ওং, হন বোল্ড। শবনিমের আগুনে পুড়ে তাতে ছারখার হয় ফিনিক্স, ফায়ার পায় অবিশ্বাস্য এক জয়।

অথচ বোলিংয়ে যে দিনটা খুব একটা সুবিধার যাচ্ছিল শবনিমের, তা নয়। প্রথম ১৫ বলে দিয়েছিলেন ২৬ রান। তবু আত্মবিশ্বাসের কমতি ছিল না তাঁর। ম্যাচ শেষে এই পেসার বলেন, ‘আমি আগেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি, ফলে নির্ভার থাকার ব্যাপার ছিল এটি। আমার ওপর স্নায়ুচাপ ছিল না। কারণ, আগেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি। চাইনি স্নায়ুচাপের কারণে পিছিয়ে পড়তে। আমাকে নির্ভার থাকতে হতো, এমনকি আমি অধিনায়ককেও তা–ই বলেছি। তাকে বলেছিলাম, “আমরাই জিতব, চিন্তা করো না। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”’

শেষ ওভারে নিজের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন শবনিম, ‘আমি ইয়র্কার করতে চাচ্ছিলাম, চেষ্টা ছিল শুধু ডট বল করার। ইয়র্কার হয়নি সত্যি বলতে, তবে উইকেট নিলে তো প্রতিপক্ষের ক্ষতি হয়ই। ফলে ভালোই কাজে এসেছে ব্যাপারটি।’

কীভাবে কী হয়েছে, সেটি অবশ্য ঠিক বলতে পারেন না শবনিম, ‘কীভাবে উইকেট পেলাম মনে নেই। তবে ফায়ারকে পার করাতে পেরে খুশি। বোলার হিসেবে সব সময়ই ঘুরে দাঁড়ানোতে বিশ্বাস করি আমি।’

এ জয়ে ৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষেও উঠে এসেছে ওয়েলশ। শবনিমের কাছে যেটি ফাইনালে যাওয়ার ‘ক্ষুদ্র এক ধাপ’। অবশ্য এজবাস্টনে যা করেছেন, সেটিকে মোটেও ছোট বলার সুযোগ নেই। নিশ্চিত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া—প্রতিদিন তো হয় না!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.