দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি। ২০২৩ সালে দেশজুড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৫৭৩ নারী। এ সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও ৫০৭ নারী। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
বছরজুড়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে জানান আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আসকের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না, সিনিয়র সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির, সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি প্রমুখ।
আসক জানায়, গত ৩৬৫ দিনে পারিবারিক নির্যাতনে ২৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৪২ জন। ২০২২ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৪৭৯ নারী। এ বছর তা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার ১৪২ নারীর মধ্যে ৬৪ জন হত্যার শিকার এবং ছয়জন আত্মহত্যা করেছেন। নির্যাতনের শিকার নারী গৃহকর্মীর সংখ্যা ৩২ জন। আর এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১০ নারী।
গত এক বছরে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যার শিকার হয়েছে কমপক্ষে ৪৮৪ শিশু। পাশাপাশি বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে অন্তত ১ হাজার ১২ শিশু।
এ ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ২০ জন। ২০২২ সালের তুলনায় এটি কমলেও বন্ধ হয়নি কিংবা এ ধরনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে আসক। দেশের কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুও বেড়েছে। গত বছর মৃত ১০৫ জনের মধ্যে কয়েদি ৪২ ও হাজতি ৬৩ জন। ২০২২ সালে কারা হেফাজতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৫।
এসব তথ্য তুলে ধরে ২০২৩ সাল নারীর প্রতি সহিংসতার আরেকটি উদ্বেগজনক বছর ছিল বলে মন্তব্য করে মানবাধিকার সংগঠনটি। এ অবস্থা পরিবর্তনে ১৫টি সুপারিশ করেছে আসক।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা এবং শাস্তি নিশ্চিত করা, মিথ্যা মামলাসংক্রান্ত অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে নিষ্পত্তিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া, ভিন্নমত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ কিংবা কোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা, নারীর সমানাধিকার নিশ্চিতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনগুলোতে পরিবর্তন এবং অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা।