তেলেগু সিনেমার মহাতারকা সাবিত্রী, যাঁকে একসময় মাধুবালা ও মীনা কুমারীর সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা করা হতো। তাঁর জীবনের গল্প দর্শকদের মনে আজও গভীর ছাপ রেখেছে। ১৯৮০-এর দশকে তিনি ছিলেন দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ১৯৬০-এর দশকে তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি রুপি। কিন্তু ব্যক্তিগত নানা ঝামেলায় পাদপ্রদীপের আলো থেকে হারিয়ে যান অভিনেত্রী। তিনি আর কেউ নন, সাবিত্রী।
স্বপ্নের শুরু ও প্রেমের পথচলা
সাবিত্রী ছোটবেলা থেকেই নাচ ও অভিনয়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন। কিশোর বয়সে সিনেমার দুনিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা শুরু করেন। মাদ্রাজের জেমিনি স্টুডিওসে কাজের সুযোগ খোঁজার সময় তিনি এক যুবক রামাসমি গণেশনের (পরবর্তী সময় ‘জেমিনি’ নামে পরিচিত) সঙ্গে দেখা করেন। গণেশন তখন স্টুডিওতে কাস্টিং সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি সাবিত্রীর ছবি তুলে লিখেছিলেন, ‘সুযোগ দিলে ভালো হবে।’
পরবর্তী সময় সাবিত্রী চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৫২ সালে এন টি রামা রাওয়ের সঙ্গে ‘পেল্লি চেসি ছুডু’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা পান। গণেশনও অভিনয় শুরু করেন। দুজনের বন্ধুত্ব ক্রমে প্রেমে পরিণত হয়। সাবিত্রী ও গণেশন বিয়ে করেন। যদিও গণেশন এরই মধ্যে বিবাহিত ছিলেন।
গোপন বিয়ে ও স্বামীর প্রতারণা
সাবিত্রী ও গণেশন তাঁদের বিয়ের খবর প্রথমে গোপন রাখেন। এটি প্রকাশ পায়, যখন সাবিত্রী একটি হেয়ার অয়েলের বিজ্ঞাপনে স্বাক্ষর দেন ‘সাবিত্রী গণেশ’ নামে। তখনই গণেশনের একাধিক সম্পর্ক ও প্রতারণা খবরের শিরোনামে আসে।

ক্যারিয়ারের পতন ও মানসিক যন্ত্রণা
সাবিত্রী নিজেও কিছু সিনেমা পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছিলেন, যা ব্যর্থ হয়। সিনেমার ব্যর্থতা ও গণেশনের প্রতারণা মিলিয়ে তাঁর জীবন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তিনি মদ্যপানের নেশায় ডুবে যান। তাঁর মেয়ে বিজয়া বলেছেন, ‘আম্মা তাঁর সমস্যা সামলাতে পারতেন না। সব ভুলে থাকতে মদে ডুবে থাকতেন।’
সাবিত্রী পরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন। ১৯ মাস কোমায় থাকার পর ১৯৮১ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান।

পরিবারের প্রভাব ও জীবনদর্শন
যদিও গণেশনও সাবিত্রীর অসুস্থতার সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বিজয়া বলেন, ‘আমাদের আর্থিক সমস্যা ছিল না। অনেক কিছু হারিয়েও যা আয় করেছিলেন, তার অনেকটাই আমরা ভোগ করেছি।’
সাবিত্রী ও গণেশনের জীবনের গল্প নিয়ে ‘মহানটী’ সিনেমা করেন নাগ অশ্বিন। যেখানে কীর্তি সুরেশ সাবিত্রী ও দুলকার সালমান গণেশনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কীর্তি এই ছবির জন্য প্রথমবারের মতো ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে

















