রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল গ্লাস হাউস’। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে একটি খাম ও র্যাপিং পেপারে মোড়ানো বাক্স রেখে দ্রুত চলে যায়। পরে খাম খুলে দেখা গেল, সেখানে ছোট্ট চিরকুট। তাতে লেখা- ‘আশা করি, ভালো আছো। ব্যবসা ভালো চলছে। আরও ভালো থাকতে আর বেঁচে থাকতে হলে এলাকার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের ছেলেদের কিছু আবদার আছে। ১০ লাখ টাকা দিবি, কোনো চালাকি করলে ওপারে চলে যাবি। সময় দেওয়া হলো মাত্র দু’দিন। এর মধ্যে আপনার জন্য গিফট পাঠানো হবে। আশা করি, দ্রুত সমঝোতা করবেন।’
খামের সঙ্গে রেখে যাওয়া বাক্স খুলে পাওয়া গেল একটি কাফনের কাপড়, লাইফবয় সাবান, তুলা, আতর, গোলাপজল ও সুরমা। খাম ও বাক্স দোকানে রেখে যাওয়ার বিষয়টি কর্মচারীরা দোকান মালিক জাহাঙ্গীর আলমকে জানান। এটি শুনে তিনি কিছুটা ভয় পান। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে ১৬-১৭ বছরের এক কিশোর ন্যাশনাল গ্লাস হাউসে ঢোকে। দোকানের ভেতরে একটি খাম রেখে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে সে। দোকানের কর্মচারীরা দৌড়ে ওই কিশোরকে আটক করেন। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, রাজীব হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাকে খামটি রেখে যেতে বলেছে। এই খামের ভেতরে থাকা চিরকুটে লেখা- ‘নিশ্চয় আমাদের পাঠানো বাক্স ও চিঠি পাইছো। মঙ্গলবার দুপুর ৩টার সময় টাকাসহ শ্যামলী ক্লাব মাঠে উপস্থিত থাকবেন। মোবাইল ফোনটা অবশ্যই খোলা রাখবেন। আপনি একা আসবেন। কোনো প্রকার চালাকি করবেন না। কোনো চালাকি করলে আপনার অসুবিধা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দোকান মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। কখনও চাঁদার দাবিতে এ ধরনের চিরকুট বা কাফনের কাপড় পাননি। দ্বিতীয় দিন খাম দেওয়ার জন্য আসা কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর রাজীব নামের এক ব্যক্তির নাম জানতে পারেন। এক যুগ আগে মোহাম্মদপুরের রাজীব নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় ছিল তাঁর। তখন তাঁরা একসঙ্গে থাই গ্লাসের কাজ করতেন। চাঁদার দাবিতে দোকানে খাম পাওয়ার দিন-চারেক আগে হঠাৎ পূর্বপরিচিত ওই রাজীব তাঁর দোকানে আসেন। দীর্ঘদিন পর তাঁকে দেখে নানা আলাপ হয়। অল্প সময় পর দোকান থেকে চলেও যান। চা, বিস্কুট খাওয়ানোর প্রস্তাব দিলে আরেক দিন এসে খাবেন বলে জানান। কিশোরের কাছে রাজীব নামটি জানার পর পুলিশকে সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁর কথা বলেছেন। তবে তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না, রাজীব চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজও যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে রাজীব নামে যার নাম পাওয়া গেছে, তার ব্যাপারে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ওই রাজীব একই ধরনের ঘটনা আরও ঘটিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্তের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেছে রাজীব। আদাবরে একই ধরনের একটি ঘটনায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছে রাজীব। যে দোকান থেকে টাইপ করিয়ে চাঁদা দাবি করে চিরকুট পাঠানো হয়, সেই দোকানটি শনাক্ত করা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজীব পুলিশের কাছে দাবি করেছে, তার কৌশল হলো রিকশায় উঠে চালককে ম্যানেজ করা। তাঁদের অনুরোধ করে, খামটি যেন দোকানে রেখে আসা হয়। চালকের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে চিরকুট ও কাফনের কাপড়ের বাক্স পাঠায়। কোনো কোনো রিকশাচালক জানান, তাঁর মাধ্যমে দোকানে কী পাঠানো হচ্ছে। এই চালকরা রাজীবের পূর্বপরিচিত।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, রাজীব কোনো চিরকুটে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে না। ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চাঁদা নেয়। তার চক্রে আর কেউ আছে কিনা, জানার চেষ্টা চলছে।