হুমকিতে শিল্প, উৎপাদন থমকে গেছে সংকটে গ্যাস

0
6

সরবরাহ না বাড়ায় দেশে গ্যাস সংকট বেড়েই চলছে। দিনে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ১৩৫ কোটি ঘনফুট। গ্যাসস্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে শিল্প। চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম গ্যাস পাচ্ছে শিল্পকারখানা। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চট্টগ্রাম, নরসিংদীসহ দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে এই সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে কারখানার উৎপাদন। অনেক কারখানা হুমকিতে, আবার কোনোটি বন্ধের পথে। বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন মালিকরা। উৎপাদন কম হওয়ায় কমছে পণ্য রপ্তানি, বিদেশ থেকে বাড়ছে কাঁচামাল আমদানি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ছে। গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে অর্থনীতিতে অশনিসংকেত দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভোগান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কারখানা চালু রাখার চেয়ে বন্ধ রাখলেই লাভ। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশনে দীর্ঘ হচ্ছে গাড়ির সারি। তবুও মিলছে না চাহিদার অনুপাতে গ্যাস। সরকার বলছে, গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির নানা পদক্ষেপ এবং শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, শিগগিরই গ্যাস সংকট দূর হবে না। বিগত দিনগুলোতে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতেই সরকারের ঝোঁক বেশি ছিল। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে চরম অবহেলা করা হয়েছে। এতে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে চাহিদা দিন দিন বেড়েছে। ফলে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দিনে প্রায় ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৮৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা গ্যাস (এলএনজি) ৮৯ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুতে দেওয়া হচ্ছে ৯৩ কোটি, শিল্পে ১০২ কোটি, সার কারখানায় ২০ কোটি, সিএনজিতে ১ কোটি এবং আবাসিক ও বাণিজ্যে ৫৭ কোটি ঘনফুট।

শিল্পে তীব্র সংকট

শিল্পকারখানার অবস্থা শোচনীয়। এমনিতেই গ্যাসের চাপ থাকে না। এখন তা আরও কমে গেছে। বিশেষ করে গাজীপুর, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। শিল্পমালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটে প্রতিদিন তাদের বিপুল লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিকল্প উপায়ে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্প উৎপাদন গভীর সংকটে পড়বে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শিল্পকারখানা বন্ধ হলে কিংবা বেতন দিতে না পারলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন।

শিল্পের মধ্যে গ্যাসের ব্যবহার বস্ত্র খাতেই বেশি হয়ে থাকে। বস্ত্রকলে স্টিম বা বাষ্প তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এই খাতে দুই বছর ধরেই গ্যাস সংকট চলছে। তবে নতুন করে গ্যাস সংকট উৎপাদন কাঠামোকে এলোমেলো করে দিয়েছে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় ৬৫ শতাংশ কম। দিনে গ্যাসের চাপ থাকছে না। গ্যাসের চাপ যেখানে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১ থেকে ২ পিএসআই। এত কম চাপের কারণে জেনারেটর চালু হয় না। এ কারণে উৎপাদন বন্ধ অনেক বস্ত্রকলে। যেখানে পিএসআই একটু বেশি পাওয়া যায়, তার সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়িয়ে কোনোরকমে জেনারেটর চালু করা যায়। এ পদ্ধতিতে কিছু কিছু বস্ত্রকল চলছে। তবে তা উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মতো। আবার জেনারেটর চালাতে অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার উৎপাদন ব্যয় বাড়াচ্ছে।

বস্ত্রকলগুলোতে সাধারণত গ্যাসের ৭৫ শতাংশ ব্যবহার বাষ্প তৈরিতে, বাকি ২৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। একজন টেক্সটাইল উদ্যোক্তা বলেন, সাধারণত একটি জেনারেটর এক হাজার কিলোওয়াটের হয়ে থাকে। ৭০০ কিলোওয়াটের শক্তি থাকলেও কাজ চালানো যায়। গ্যাস সংকটের চাহিদা অনুসারে শক্তি মিলছে না। এতে জেনারেটর দ্রুতই নষ্ট হচ্ছে। প্রায় সব বস্ত্রকলেই জেনারেটর নষ্ট হওয়ার ঘটনা আছে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন জেনারেটর কিনতে হয়। উৎপাদন কমে আসায় ক্ষতি কমাতে অনেক বস্ত্রকল শ্রমিক ছাঁটাইয়ে বাধ্য হয়েছে। চাপ কম থাকায় ডাইং ও প্রিন্টিংয়ের মান খারাপ হচ্ছে।

পোশাক খাতের মধ্যে নিট, অর্থাৎ গেঞ্জিজাতীয় পণ্যের প্রায় শতভাগ কাঁচামাল দেশীয় বস্ত্রকলগুলো জোগান দিয়ে থাকে। কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেছেন, বস্ত্রকলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাড়তি ডলার ব্যয়ে কাঁচামাল আমদানি করার কথা জানান তারা। নিট পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কাঁচামাল পাচ্ছে তারা। এ কারণে নিটের রপ্তানি পোশাকের উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমেছে।

সাভার ও আশুলিয়ায় কারখানা চলছে ধুঁকে ধুঁকে

গত মঙ্গলবার সাভার ও আশুলিয়ার কয়েকটি পোশাক কারখানায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানায় গ্যাস সংকট। এর ফলে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহার করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

আশুলিয়ার স্কাইলাইন গ্রুপের পোশাক কারখানার ম্যানেজার (প্রশাসন) রাজীব আহম্মেদ জানান, গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।

ডিইপিজেড-সংলগ্ন ফাউন্টেন পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গ্যাসের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন চালু রাখা হয়েছে। বাইপালের শাহারিয়ার পোশাক কারখানার এক কর্মকর্তা জানান, একদিকে শ্রমিক আন্দোলন, অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট– সবকিছু মিলিয়ে এ পোশাকশিল্প চরম হুমকির মুখে। সাভারের আল-মুসলিম গ্রুপের কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করছে।

গাজীপুরের সবখানেই সংকট

গাজীপুরের ভোগড়া, বাসন সড়ক, বোর্ডবাজার, হোসেন মার্কেট, পুবাইল, জয়দেবপুর, কড্ডা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর, মৌচাক, পল্লী বিদ্যুৎ, কালিয়াকৈর বাজার, সাহেববাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট রয়েছে। হরিণহাটির গোমতি টেক্সটাইল কারখানায় মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যাস সংকটে জেনারেটর ও বয়লার মেশিন বন্ধ রয়েছে। ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, গত ১৫ দিন গ্যাস সংকটে বয়লার মেশিন সব বন্ধ রয়েছে। আগে ৩ পিএসআই এ গ্যাস পেতাম, এখন দশমিক ৫ পিএসআইও পাই না।

কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকার সামছুল আলামিন স্পিনিং মিলে ৪০টি মেশিনের সবকটিই বন্ধ। শ্রমিকরা অলস বসে সময় অতিক্রম করছেন। তারা জানান, সকালে কয়েকটা মেশিন চালু করলেও দুপুরের পর আর চলে না। এ কারখানার ম্যানেজার সারোয়ার আলম বলেন, সুতা তৈরির কারখানায় ১০ পিএসআই পাওয়ার কথা থাকলেও কয়েক মাস আগে দেড় পিএসআই গ্যাস পেতাম। এখন একদম গ্যাস নেই।

পূর্ব চান্দরার লিজ ফ্যাশনের ম্যানেজার (প্রশাসন) রাজু আহমেদ বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকায় প্রিন্টিং ডায়ার মেশিন দিয়ে নিয়মিত উৎপাদন করানো যাচ্ছে না। কোনাবাড়ীর একটি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান জানান, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে। সফিপুর আনসার একাডেমি এলাকার স্টার্লিং কারখানায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গ্যাসের স্বল্পতায় নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। আর এই জেনারেটর চলে গ্যাস দিয়ে। গ্যাস সংকটে উৎপাদন একেবারেই কমে গেছে।

তিতাস গ্যাসের চন্দ্রা জোনাল শাখার ব্যবস্থাপক খুরশেদ আলম বলেন, আমাদের চাহিদা ১০০ কোটি, পাচ্ছি ৭০ কোটি ঘনফুট। কিছুদিনের মধ্যেই আরও ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির কথা রয়েছে। তখন এই ভোগান্তি কমবে।

প্রতিষ্ঠান চালু রাখলেই ক্ষতি, বন্ধে লাভ 

গ্যাস সংকটে নারায়ণগঞ্জের অনেক ডাইং কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো চালু রাখলে ক্ষতি আর বন্ধ রাখলে লাভ– এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফতুল্লা ডাইং অ্যান্ড ক্যালেন্ডারিংসের পরিচালক মিনহাজুল হক জানান, আমাদের ডাইং সক্ষমতা দৈনিক ২০ টন। কিন্তু গ্যাস কম পাওয়ায় দিনে আট টনের বেশি ফেব্রিক্স রং করতে পারছি না। বুধবারে সাপ্তাহিক ছুটি। কিন্তু গত সপ্তাহে শুক্রবারে গ্যাসের অভাবে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

তিনি বলেন, কাজের সময় হঠাৎ গ্যাসের চাপ কমে গেলে যে কাপড় মেশিনে আছে, সেটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। উপযুক্ত পরিমাণে গ্যাসের চাপ না থাকলে যে কাপড়টি রং করা হলো, সেটি আবারও রং করতে হয়। গ্যাস সংকটে এভাবে ধাপে ধাপে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গত ২০ মাসে গ্যাসের বিল তিন গুণ করা হয়েছে। আগে বিল দিতাম বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৪ টাকা ও বয়লারের জন্য ১৫ টাকা; কিন্তু এখন ফ্ল্যাট রেটে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা বিল দিতে হচ্ছে। বেশি বিল দিয়েও আমরা গ্যাস পাচ্ছি না, ফলে সবদিক দিয়েই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ডাইং চালু রাখলে আমার ক্ষতি; বরং বন্ধ রাখলে লাভ। গত অর্থবছরে কারখানা চালু রেখে সাড়ে সাত কোটি টাকা লস করেছি। ব্যাংক লোন না থাকলে আমি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতাম। আমার দু’পাশের দুটি ডাইং কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আড়াইহাজার ও মাধবদীর অনেক টেক্সটাইল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রামে কমছে উৎপাদন, বাড়ছে ব্যয়

চট্টগ্রামে ছোট-বড় ১ হাজার ২০০ কারখানায় গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৮ থেকে ১০ কোটি ঘনফুট। চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকছে প্রায় ৩০ শতাংশ। জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, রড তৈরির রোলিং মিলে গ্যাস লাগে। আবার রড তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনেও দরকার হয় গ্যাসের। এটির জোগান ঠিকমতো না পেলে সমস্যায় পড়তে হয়। ইস্পাত খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে হলে দায়িত্বশীলদের গ্যাসের বিষয়ে ভাবতে হবে।

মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সরোয়ার আলম বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গোল্ডেন ইস্পাত কারখানায় প্রতিদিন রড উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ টন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে পড়ে ৩০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন কমেছে। রড উৎপাদনের চুল্লি গরম করতে সাধারণত ৪০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু গ্যাসের চাপ কম থাকায় দিনের বেলায় ৩-৪ গুণ বেশি সময় লাগছে।

ইস্পাতের মতো সিমেন্ট ও কাচ শিল্পেও গ্যাস সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সিমেন্ট শিল্পে জেনারেটর চালু রাখতে এবং কাঁচামাল শুকানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দরকার। চাহিদামতো গ্যাস না পেলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমির হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের চাপ কম থাকলে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়।’

নরসিংদীতেও ভোগান্তি

নরসিংদীর মাধবদী, পাঁচদোনা, ভাটপাড়া, শেখেরচরসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানা এবং সিএনজি পাম্পে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না। পাকিজা গ্রুপের পোশাক কারখানার হেড অব অপারেশন রাশেদুর রহমান জানান, এই কারখানার ক্যাপটিভ জেনারেটরের গ্যাসের চাপ ১৬ পিএসআই। কিন্তু গত এক বছরে ৩ থেকে ৫ পিএসআই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে শূন্য থেকে ২ পিএসআইয়ে গ্যাস আসে। তখন আর কারখানা ও জেনারেটর কোনোটাই চালানো যায় না। গ্যাস সংকটে ৭০০ তাঁতের মধ্যে ৩০০টিই চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে দিনে প্রায় দুই কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। বয়লারও ঠিকমতো স্টিম হচ্ছে না। তাই ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং সক্ষমতা দেড় লাখ মিটার থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন মাত্র ৬০ হাজার মিটার। এতে বিদেশি অর্ডার যথাসময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এমএমকে ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোমেন মোল্লা জানান, আমাদের প্রতিটি শিল্পকারখানায় ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহের অনুমোদন থাকলেও পাই ৩ থেকে ৪ পিএসআই। এতে উৎপাদন ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কম।

সিএনজি স্টেশনে গাড়ির লাইন

সরবরাহ কমায় ঢাকাসহ সারাদেশের ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস দিতে হলে লাইনে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় ১৫ পিএসআই। তবে তা পাওয়া যায় না। ৬-৭ পিএসআইয়ে গ্যাস দেওয়া হয় সাধারণত। এখন তা আরও কমে গেছে। ফলে সংকট বেড়েছে।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

বেসরকারি বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক এবং লিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সমকালকে বলেন, শিল্পে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সংকট কিছুতেই কাটছে না। সাভার, আড়াইহাজারসহ বস্ত্র খাতের বড় কারখানা রয়েছে– এমন সব জায়গায় গ্যাস সংকট আগের মতোই।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানির দিকেই বেশি নজর দিয়েছিল। তাই সংকট বেশি ঘনীভূত হয়েছে। গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। তিনি বলেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করে উদ্বৃত্ত গ্যাস শিল্প খাতে সরবরাহ করা সম্ভব। এতে সংকটের একটা সুরাহা হবে। কারণ দেশের রিজার্ভের যা অবস্থা, এতে এলএনজির ওপর বেশি নির্ভর করা যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, শিল্পে গ্যাসের সংকট সমাধানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার; নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.