স্বজনদের কাছে ফিরলেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক

0
130
ফিরলেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাস পর চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে পৌঁছেছেন নাবিকেরা। তাঁরা এমভি জাহান মণি-৩ লাইটার জাহাজে করে এসেছেন। এর আগে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে নেমে তাঁরা এমভি জাহান মণি-৩ লাইটার জাহাজে ওঠেন।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায়।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর নাবিকদের কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনেরা। সেই দিনের অবসান হচ্ছে আজ। নাবিকদের দেখা পেতে স্বজনেরা বন্দর জেটিতে ভিড় করেছেন। তাঁদের কারও হাতে ছিল ফুল, কারও হাতে কেক। এক মাস আগে সোমালিয়ার দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও এত দিন নাবিকদের দেখা পাননি স্বজনেরা। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি আরব আমিরাত ঘুরে চট্টগ্রামে আসার পর প্রথমবার নাবিকদের দেখা পেলেন স্বজনেরা।

চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে
চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে

জেটি চত্বরে ছেলে ও এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের মা জ্যোৎস্না বেগম। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। এখন ছেলেকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে।’

বাবা আসবেন, এ জন্য জেটি চত্বরে ছুটে এসেছেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের দুই মেয়ে। তাঁরা বলেন, ‘বাবাকে কাছে পাব, এটা ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে। আমাদের আজ অনেক অনেক খুশির দিন।’

জেটি চত্বরে অপেক্ষায় আছেন নাবিক আইয়ুব খানের ভাই ওমর ফারুক। তিনি এসেছেন লক্ষ্মীপুর থেকে। তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের জন্য অনেক চিন্তায় ছিলাম। জলদস্যুদের কাছ থেকে কবে মুক্তি পাবে, কবে দেশে আসবে, এর অপেক্ষায় ছিলাম এত দিন ধরে। এখন ভাই দেশে এসেছে, চিন্তা দূর হয়েছে। অনেক খুশি লাগছে। পরিবারের সবার মধ্যে স্বস্তিও এসেছে।’

নাবিকদের বরণ করে নিতে বন্দর জেটিতে ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, এ সময় কেএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার জাহান রোকন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।

চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে
চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে

উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘আমাদের ভাইয়েরা আমাদের কাছে ফিরে এসেছেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। আমরা অনেক খুশি। জিম্মি হওয়ার পর থেকে মুক্তি পাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা—এ পর্যন্ত সব কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’

এমভি আবদুল্লাহ বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায়। জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) বেশি হওয়ায় (সাড়ে ১২ মিটার) তা বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ নেই। এ কারণে তীর থেকে নৌযানে করে সাগরে নোঙর করে রাখা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিতে উঠে নতুন করে ২৩ জন নাবিক যোগদান করেন। নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকেরা। এরপর মুক্ত নাবিকেরা ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণিতে করে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছান।

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত করা হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল। আরব আমিরাত থেকে রওনা হওয়ার ১৪ দিন এবং জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় ঘরে ফিরলেন নাবিকেরা।

চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে
চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকেরা। আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে

মুক্ত নাবিকেরা হলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ, প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রুকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ ও ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান।
জাহাজের অপর নাবিকেরা হলেন ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মো. আনওয়ারুল হক, মো. আসিফ উর রহিম, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আইনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ, মো. শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.