সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মতিউরকে

0
65
মতিউর রহমান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আলোচিত সদস্য মতিউর রহমান রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক পিএলসির পরিচালক। তবে আজ রোববার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠেয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মতিউর রহমান উপস্থিত থাকছেন না। চলতি সপ্তাহের মধ্যে পরিচালক পদ থেকে তাঁকে অপসারণও করা হতে পারে।

আজ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ব্যাংকটির পর্ষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও সোনালী ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সোনালী ব্যাংককে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মতিউর রহমান যেন পর্ষদে উপস্থিত না হন। ব্যাংকও মতিউর রহমানকে উপস্থিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এবং তিনিও তা মেনে নিয়েছেন।

এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে মতিউর রহমানের ছেলে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে উঠে আসে।

এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

মতিউর রহমান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি। পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য তাঁকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ; পুনর্নিয়োগ না পাওয়ায় তিনি গত মাসে অবসরে গেছেন।

সূত্রগুলো জানায়, শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ যেহেতু মতিউর রহমানকে আগে থেকেই ভালো করে চিনতেন, সেহেতু তিনি তাঁকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তৎকালীন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদারের তদবির আর ফেলতে পারেননি।

এ অভিযোগের সত্যতা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে গতকাল শনিবার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয়। বার্তাটি তিনি দেখলেও জবাব দেননি; এমনকি শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহও কথা বলতে চাননি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের পর সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ আর তাঁকে আটকায়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও সহজেই অনুমোদন দিয়ে দেয়। জানা গেছে, সাম্প্রতিক ছাগল কাণ্ডের পর মতিউর রহমানের সবকিছু উন্মোচিত হতে থাকলে ব্যাংকটির অন্য পরিচালকেরা বেঁকে বসেন। তাঁরা আর মতিউর রহমানকে পর্ষদ বৈঠকে চাইছেন না।

এ বিষয়ে মতিউর রহমানের বক্তব্য জানতে আজ সকালে তিনবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বর্তমানে আছেন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক দৌলতুন্নাহার খানম, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোল্লা আবদুল ওয়াদুদ ও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ) প্রতিষ্ঠান বসু ব্যানার্জি নাথ অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অংশীদার গোপাল চন্দ্র ঘোষ।

ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বড় ধরনের ঋণ প্রস্তাব পর্ষদে উঠলে সেসব বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করতেন। পর্ষদের অন্য সদস্যদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হতে পারতেন না। পরবর্তীকালে তিনি ছোট ছোট ঋণ প্রস্তাব পাস এবং পাস না করা নিয়ে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে মনোযোগী হন, যেগুলো পর্ষদে আসত না।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিব আবদুর রহমান খান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের মানমর্যাদা রক্ষায় মতিউর রহমানকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হতে পারে। আজ রোববার থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে মতিউর রহমানকে আর রাখা হচ্ছে না, এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের শত শত লোক যে গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় বসে আছেন, তাঁদের নিয়োগ দিচ্ছে কারা, কেন দিচ্ছেন? যথাযথ তদন্ত হলে মতিউর রহমান তো এনবিআরের সদস্য পদে থাকার যোগ্যতাও হারাবেন বলে আমার মনে হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.