সেরা আক্রমণভাগ নিয়ে কাতার যাচ্ছে ব্রাজিল

0
197
কাতার যাওয়ার আগে ইতালির তুরিনে অনুশীলনে নেইমার -এএফপি

বিশ্বকাপের বাঁশি বাজল বলে! বছর, মাস, দিন গড়িয়ে এখন ঘণ্টার অপেক্ষা। কাতারের মরূদ্যানে ফুটবে ফুটবলের ফুল। দোহার সঙ্গে মিলে যাবে বিশ্বের ঘড়ির কাঁটা। মেরু থেকে মরু- সব যেন একাকার। ফুটবল উৎসবে মাতিয়ে তুলতে প্রস্তুত কাতার। এই উৎসবে বরাবরের মতো ব্রাজিলের গায়ে ফেভারিট তকমা ভালোভাবেই লেগে আছে। কোচ তিতের স্কোয়াডটা আসলেই এবার শক্তিশালী। বিশ্বকাপের বাঁশি বাজার আগে তাই সমর্থকদের মুখে মুখে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায় ব্রাজিল। তবে ফেভারিটের তকমাটাই যে পছন্দ হচ্ছে না রদ্রিগো ও মার্কুইনহোসের। তাঁরা মনে করছেন, সেরার উপাধি বিপদ ডেকে আনতে পারে দলে। এ নিয়ে সতীর্থদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সেলেকাওয়ের দুই তারকা।

ব্রাজিল খেলোয়াড়রা বাইরের জগৎ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চাইলেও মিডিয়া ঠিকই সেরার বার্তা পৌঁছে দেবে দলের অন্দর মহলে। বিশ্নেষণ করে দেখলে ব্রাজিল সত্যিই সেরা দল নিয়ে এসেছে বিশ্বকাপে। একঝাঁক ফরোয়ার্ড স্কোয়াডে। কোচ তিতের দুর্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছেন আক্রমণে থাকা খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ২৬ সদস্যের স্কোয়াড নিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি দল। আক্রমণভাগের শক্তি বিচারে ব্রাজিল আছে সেরা অবস্থানে। ফিফা চলতি সপ্তাহে দলগুলোর খেলোয়াড়ের যে তালিকা দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সেলেকাও স্কোয়াডে আক্রমণভাগে আছেন ৯ জন। কাতার বিশ্বকাপে এ পজিশনে ৯ খেলোয়াড় থাকা অন্য দল বেলজিয়াম। যদিও বেলজিয়ামের তালিকায় কিছুটা গোঁজামিল রয়েছে। তাদের তালিকায় আক্রমণভাগে ক্যারাসকো ও এডেন হ্যাজার্ডকে রাখা হয়েছে। যাঁদের প্রায়ই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ও লেফট উইং পজিশনে খেলানো হয়। ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের পরে আক্রমণভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আটজন করে আছেন অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও মেক্সিকো দলে। আর্জেন্টিনা, ক্যামেরুন, নেদারল্যান্ডস ও সেনেগালের স্কোয়াডে আক্রমণভাগে সাতজন খেলোয়াড় রয়েছেন।

মোট ২১ বিশ্বকাপের মাত্র তিনটি আসরে ব্রাজিল স্কোয়াডে ৯ জনের বেশি আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ছিলেন। সেই ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে সেলেকাওদের স্কোয়াডে ১১ জন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ছিলেন। পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী দলের আক্রমণভাগে সর্বোচ্চ খেলোয়াড় থাকার সে রেকর্ড এখনও অটুট। ১৯৩৮ ও ১৯৫০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আক্রমণভাগে ছিলেন ১০ জন। এর পর সাত দশকের বেশি সময়ে ১৭টি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট খেলা ব্রাজিল এবারই আক্রমণভাগে সর্বোচ্চ খেলোয়াড় নিয়ে ফুটবল মহাযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। ১৯৮২ সালের পর কোনো বিশ্বকাপেই আক্রমণভাগে পাঁচজনের বেশি খেলোয়াড় ব্রাজিল স্কোয়াডে ছিলেন না।

আক্রমণভাগে অধিক রিজার্ভ খেলোয়াড় থাকাটা কী সুবিধা দেবে? সেটা হলো প্রথমত, আক্রমণভাগের কোনো খেলোয়াড় চোটে থাকলে দলকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। দ্বিতীয়ত, কোচ চাইলে ম্যাচের শুরুতে ও শেষে তাঁর পছন্দমতো আক্রমণভাগে জুটি মাঠে নামাতে পারবেন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যেমনটা ছিলেন বেবেতো-রোমারিও অথবা মুলার জুটি।

আক্রমণভাগের জন্য একাদশের বাইরে একজন মাত্র ভালো বদলি খেলোয়াড় তৈরি করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যেটা ২০১৮ বিশ্বকাপে ভালোভাবেই টের পেয়েছে ব্রাজিল। দ্য মানো এ মানো, অর্থাৎ একজনের জন্য মাত্র একজন বিকল্প তৈরি রাখা- ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে আক্রমণে সেরা বদলি খেলোয়াড় ছিলেন ডগলাস কস্তা। কিন্তু আসরের শুরুর দিকেই তিনি চোটে পড়েন। তখন নেইমারকে আক্রমণভাগের চেয়ে মাঝমাঠেই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু এবার পরীক্ষিত একঝাঁক আক্রমণভাগের খেলোয়াড় থাকায় এ পজিশনে ইচ্ছামতো সাজাতে পারবেন কোচ তিতে। রাফিনহা ও আন্তোনিওকে ডান দিক এবং ভিনি জুনিয়র ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিকে বাঁ বূ্যহ সামলাতে দায়িত্ব দিতে পারেন। এক্ষেত্রে রদ্রিগো হতে পারেন তিতের ওয়াইল্ড কার্ড বা জোকার। তিনি দু’দিকেই খেলতে পারেন এবং নেইমারের মতো মাঠে নিচেও নেমে খেলতে পারেন।

এবারের ব্রাজিল দলে ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলা অনেকেই আছেন। ভিনিসিয়ুস ও নেইমারদের মতো বড় তারকা থাকা যে কোনো দলের জন্যই বিশাল কিছু। গত বিশ্বকাপের পর কোপা আমেরিকার দুই আসরের ফাইনাল খেলেছেন তাঁরা। কাগজে-কলমে ব্রাজিলকে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গ্রুপ ‘জি’তে তাদের প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন, সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ড। যাদের বিপক্ষে ব্রাজিলকে ফেভারিটের তকমা দিতে কেউই দ্বিমত করছেন না। তবে এসব সেরা বা ফেভারিট তকমার বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে সতীর্থদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রদ্রিগো ও মার্কুইনহোস। তাঁদের মতে, এগুলো দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিয়াল তারকা রদ্রিগো বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের জাতীয় দলটি অসাধারণ, যারা টুর্নামেন্টের সেরাদের অন্যতম। কিন্তু টুর্নামেন্টে আরও ভালো দল রয়েছে। নিজেদের ফেভারিট ভেবে মাঠে এসে সেটা করে দেখাতে না পারাটা কোনো কাজের কথা নয়। আমরা জানি, প্রত্যেকেই তাঁদের ক্লাবের হয়ে সেরা সময়ে ছিলেন। আর সে কারণেই তাঁরা বিশ্বকাপ দলে। অনেক ভালো খেলোয়াড়কেও ফেলে রেখে আসতে হয়েছে।’ প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের সেন্টারব্যাক মার্কুইনহোস রদ্রিগোর সুরে তাল মিলিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি নিজেদের সেরা ও ফেভারিট মনে করি, তাহলে সামনে এগোতে পারব না। আমরা দেখেছি প্রতিযোগিতায় কী ঘটে থাকে, এখানে ভালো করা সত্যি খুব কঠিন। প্রতিটি দলই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে এবং ভারসাম্যপূর্ণ দল। তারা কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। আর এটাই বিশ্বকাপ।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.