সেনা সদরে হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু বিচারের জন্য সেনা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ‘গুজব নয়, দেশপ্রেমে ঐক্য: সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহত করণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ এই দাবি জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় রেখে ম্যানুয়াল অব ব্যাঞ্জিন মিলিটারি আইন (এমবিএমএল) সংশোধন করে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। এভাবে যদি না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ বিচারের স্থায়িত্ব বা টিকে থাকার সম্ভাবনা কম।
সেনাবাহিনীর সাবেক এই কমর্কতা বলেন, আইসিটি আইন ও সংবিধানের মধ্যে কিছু ধারা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। এমনকি আইসিটি অ্যাক্টের একটি ধারা আছে, যা সাংঘর্ষিক হলে আইসিটি অ্যাক্ট প্রাধান্য পাবে। ১০ থেকে ১৫ বছর পর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংবিধানের আর্টিকেল ৩৫,৩৬, ৬৫, ৫২-এর ফাঁকফোকর থেকে পার পেতে পারেন। এ জন্য তাঁরা সংশোধনের মাধ্যমে সেনা আইনে বিচার চেয়েছেন।
সাইফুল্লাহ খান সাইফ আরও বলেন, সেনা আইনে বিচার হলে, পরবর্তী সময়ে তাঁদের (অপরাধীরা) পার পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। প্রয়োজনে সে সেনাবাহিনী কী ধরনের বিচার করছে, সেটি সারা বাংলাদেশের জনগণ লাইভ দেখবে। যেভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালেরটা দেখেছে। বিচার করতে গিয়ে কোনো ধরনের তাড়াহুড়া যেন না করা হয়, বিচার যেন সুষ্ঠুভাবে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদের সময় যাঁরা সহযোগিতা করেছিলেন, যাঁরা অপরাধ করেছেন, বিভিন্ন গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে; কিন্তু বিচারকাজটা যেন সেনা আইন ও সাধারণ আইনের মধে৵ সমন্বয় করে করা হয়।
অতীতের মতো তড়িঘড়ি করে আইসিটি আইন পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত আক্রোশ বা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে একচেটিয়াভাবে বিচার করা হলে তা ফ্যাসিবাদের আমলের বিচারকাজের মতো ত্রুটিপূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একটি ভবনকে জেল ঘোষণার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সেনা কমর্কতা রোকন উদ্দিন বলেন, এটা প্রথমবার নয়। সাবজেলে এর আগেও অনেককে রাখা হয়েছে। কোনো বিশেষ কারণ নেই। সরকার যখন যেখানে চাইবে, অপরাধীকে রাখবে। এখন সরকার এটা রাজি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ কারণে তাঁরা ভবন খালি করেছে। সরকার যদি তাঁদের অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে চায়, নিয়ে যাবে; কিন্তু কেউ অপরাধী প্রমাণিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে জেলে নেওয়া তো সঠিক নয়।
লিখিত বক্তব্যে লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কিছু কুচক্রী মহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে জড়িত। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই অপতৎপরতা কোনোভাবেই দেশপ্রেমী জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী সেনা সদস্যদের বিপথে নিতে পারবে না।
সাবেক এই সেনা কমর্কতা বলেন, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, বাংলাদেশের সংবিধান সেনা আইনের বৈধতা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আদালতও সংবিধান স্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সঙ্গে সেনাবাহিনী সমন্বয় করে একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে আর কারও মায়ের বুক খালি করবে না, কোনো স্ত্রীকে বিধবা করবে না, কোনো সন্তানকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করবে না।
লিখিত বক্তব্য আরেও উল্লেখ করেন, তাঁরা অপরাধীদের বিচারের পক্ষে, তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সংবিধান ও মানবাধিকারের মূলনীতির আলোকে যেখানে কোনো ফুলস্টপ থাকবে না। রাষ্ট্র ও সংবিধান স্পষ্টভাবে বলেছে, কোনো ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে অপরাধী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে অপরাধী বলা যাবে না এবং তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হন, তাহলে তাঁর চাকরি আইনিভাবে বহাল থাকবে।
সাইফুল্লাহ খান জোর দিয়ে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়া বা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ণ করা, কোনো দেশপ্রেমীর কাজ হতে পারে না। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সামনে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হবে, এমন কোনো পরিস্থিতি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না।
সংবাদ সম্মেলনে সার্জেন্ট (অব) মুশফিকুর রহিম রনি ও সাবেক সৈনিক হানিফ হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।