পাঁচ গ্রামের লোকজন বর্ষায় নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে খাল পারাপার হতেন
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় হরেখালী খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ দুই বছর ধরে বন্ধ। বিকল্প সড়ক না থাকায় উপজেলার পাঁচ গ্রামের মানুষ যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কাজ শুরু করার সময় একটি লোহার অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সেই সেতুও নড়বড়ে হয়ে গেছে।
উপজেলা যোগানিয়া ইউনিয়নে কুত্তামারা এলাকায় হরেখালী খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যোগানিয়া ইউনিয়নের কুত্তামারা গ্রামের হরেখালী খাল পাড় হয়ে গয়রাকুড়া, ঘোড়ামারা, দিকপাড়া, পোড়াবাড়ী, ধান্নাবাড়ী ও বাথুরকান্দা গ্রামের লোকজনকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, খালে পানি নেই। মাঠ দিয়ে অনেকে হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছেন। সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই পাশে সেতুর দুটি পাকা পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান দিয়ে রড বেরিয়ে আছে। এ ছাড়া খালের মধ্যে আরও দুটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো এখনো বাঁশ দিয়ে ঠেক দিয়ে রাখা হয়েছে। সেতুটির পাশে অস্থায়ীভাবে নির্মিত লোহার সেতু দিয়ে অটোরিকশা ও ভ্যান চলাচল করছে। তবে অটোরিকশায় করে সেতুর ওপর উঠলে বোঝা যায়, সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। লোহার সেতুর কিছু কিছু স্থানে মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, যানবাহন নিয়ে খালের অপর দিকের পাঁচ গ্রামে যাওয়া যেত না। তাঁরা বর্ষায় নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাচল করতেন। তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় তাঁরা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর ধরে সেতুর কোনো কাজ হয় না।
গয়রাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ঝড়–বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই খাল পার হয়ে পাঁচ গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা বাথুয়ারকান্দা উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। যদি এই সেতুর কাজ ঠিক সময়ে শেষ হতো, তাহলে পাঁচ গ্রামের মানুষের অনেক সুবিধা হতো।
যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় পাঁচ গ্রামের মানুষ কৃষিপণ্য নিয়ে লোহার সরু সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গেছে। এখন এ সেতু তাঁদের গলার কাঁটা হয়ে আছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ‘অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় হরেখালী খালের ওপর ৭২ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ‘মেসার্স আকরাম কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৩০ জুলাই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর কাজ হচ্ছে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাব–ঠিকাদার মো. আবদুল মোমেন বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন সেতুর পাটাতন করতে হবে। আশা করছেন, দ্রুত সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে। এ জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।
এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী রাকিবুল আলম বলেন, সেতু নির্মাণকাজের সময়সীমা ছিল ১৪ মাসের। কিন্তু ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে দ্রুত ঠিকাদার কাজ শেষ করবেন বলে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।