সাত কলেজ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত, তবে অধ্যাদেশসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ

0
19
সাত কলেজ

ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের সমন্বয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে জটিলতা বিবেচনায় বস্তুনিষ্ঠভাবে ও বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

আজ মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে মূলত প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের ধারাবাহিক কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করাসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কিছুটা সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন এবং সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার জন্যও বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ঢাকার এই সাত কলেজ ঘিরে অনেক দিন ধরেই সংকট চলছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এই সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। বাকি পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও পড়ানো হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে।

সম্প্রতি এসব কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে, তার কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে নতুন যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কাটেনি। বরং নতুন নতুন সংকট সামনে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করে শিক্ষকেরা এর আগে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন। আজ থেকে টানা তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু করেছেন তাঁরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ—এসব বিষয়ে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক চাহিদাকে সামনে রেখে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫ ’-এর খসড়া প্রণয়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠায়।

অধ্যাদেশের খসড়াটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজন ও সর্বসাধারণের মতামত আহ্বান করা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীজনের কাছ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি মতামত পাওয়া যায়। অনলাইন ও সরাসরি মতামত গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ পর্যন্ত তিনটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ প্রতিটি মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করছে। মতামত পর্যালোচনা করে খসড়াটি পুনর্মূল্যায়ন ও পরিমার্জনের কাজ শুরু হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রস্তুতিকালীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা কোনোভাবেই যেন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সচেতন ও সক্রিয় রয়েছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগপর্যন্ত শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে একজন অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ক্লাস পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউজিসির অংশগ্রহণে ১১ নভেম্বর সভা করে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ক্লাস শুরুর সময় ২৩ নভেম্বর ঠিক করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব, অংশীজনের ব্যাপকতা এবং সাত কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণ, কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় সমন্বয়ের জটিলতা বিবেচনায় বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমকে দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকসহ সব অংশীজনের ন্যায্য স্বার্থ রক্ষা এবং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ইতিবাচক একাডেমিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা এ বিভাগের প্রধান লক্ষ্য।

ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন বলেও বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.