সাকিবের রেকর্ড গড়া দিনে সান্ত্বনার জয়

0
196
তৃতীয় ওয়ানডেতে জয়ের পর ম্যাচের নায়ক সাকিবকে কাঁধে তুলে নেন এবাদত-মুশফিকরা বিসিবি

সাকিবের বল্গাহীন উদযাপন, এবাদতের স্যালুট, মিরাজের হাইফাইভ দেখে মনে হচ্ছিল– আজ (গতকাল) কিছু হতে চলেছে। যে ম্যাচে ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় ‘দম’ থাকে, সেদিন জয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ক্রিকেটাররা যেটাকে বলে থাকেন মোমেন্টাম বা ছন্দ। গতকাল চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে সেই চপলতার কোলাজ ফ্রেমবন্দি হয়েছে। পারফরম্যান্স প্রদর্শনের শেষটায় তাই লেখা হয়েছে জয়। প্রাপ্তির খাতায় এটা শুধু একটি জয়ই নয়, অনেক অস্বস্তি থেকে মুক্তিও। দেশের মাটিতে ৯ বছর পর ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারা, টি২০ সিরিজে জয়ের ছন্দ নিয়ে যাওয়া এবং বিশ্বকাপ সুপার লিগে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিল আরও একটু সমৃদ্ধ করা তো প্রাপ্তিযোগই। এই স্বস্তি, প্রাপ্তি আর মুক্তির আনন্দদাতা সাকিব। যিনি কিনা ব্যাটিং-বোলিংয়ে অবদান রাখা সব্যসাচী। হাফ সেঞ্চুরি ও চার উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে উইকেটের মাইলফলকও ছুঁলেন জয়ের ম্যাচে।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে সিরিজ হারেই কোচিং স্টাফের কপালের ভাঁজ বড় হয়েছিল। চট্টগ্রামের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বা অধিনায়ক তামিম ইকবাল না এসে পাঠান স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথকে। দলীয় প্রতিনিধি হয়ে তিনিই বলেছিলেন, এবারের উইকেটে ভারতের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হবে না। বোঝা গেল, উইকেটটা ভালোই পড়েছিলেন হেরাথ গং। বাংলাদেশ জুটি গড়ার পরও আড়াইশ রানে যেতে পারেনি। বিতার্কিকরা যুক্তি দেখাতে পারেন, ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করলে বড় স্কোর হতো। তাঁদের জন্য পাদটিকা– জশ বাটলাররা ২৪৬ রান তাড়া করতে ব্যর্থ। সাকিব-তাইজুলদের কাছে অলআউট ১৯৬ রানে।

এই সিরিজে টানা তিন ম্যাচে টসে জিতে পছন্দমতো ব্যাটিং-বোলিং বেছে নিতে পেরেছেন তামিম। গতকাল ব্যাটিং নিয়ে ঝাকি খেলেন প্রথমে। ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা বোঝা গেছে পরে। ১৭ রানে দুই উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসানের হাফ সেঞ্চুরিতে হয়েছে শোভন স্কোর। তিন ফিফটির দুটিই সত্তর ছোঁয়া। এর একটি সেঞ্চুরিতে রূপ নিলে দলের সংগ্রহ ২৮০ রান হতে পারত। এ জন্য মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন বা মেহেদী হাসান মিরাজের যে কোনো একজনকে সাকিবের সঙ্গে জুটিতে টিকে থাকতে হতো শেষ পর্যন্ত। অবশ্য ম্যাচ জিতে গেলে সমর্থকরা এসব ধর্তব্যে নেন না, কোচের নোটবুকে লিপিবদ্ধ থাকে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে লিখে রেখেছেনও। প্রতিটি ব্যাটারের নামের পাশে আলাদা আলাদা সংকেতও দিয়েছেন তিনি। মুশফিক, শান্তকে এক স্টার দিলেও সাকিবকে ডাবল স্টার দিলেন চন্ডিকা। কারণ, ম্যাচ জিতিয়েছেন সব্যসাচী এ ক্রিকেটার। ৭১ বলে ৭৫ রান আর চার উইকেট নিয়ে রেকর্ডবুকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।

ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজে সাকিবের সামনে দুটি রেকর্ডের হাতছানি ছিল– ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক দিনের ক্রিকেটে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করতে ছয় উইকেট নিতে হতো তিন ম্যাচে। প্রথম দুই ম্যাচ থেকে শিকার মাত্র দুই উইকেট। শেষ ম্যাচে প্রয়োজন ছিল চার উইকেট। সে কোটা পূরণ করে (চার উইকেট) প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়ে ফেলেন ৩০০ ওয়ানডে উইকেট প্রাপ্তির ল্যান্ডমার্ক। এক দিনের ক্রিকেটে ৭ হাজার রানে যেতে ১৬৫ করতে হতো সিরিজে। ২৪ রান কম করায় আয়ারল্যান্ডের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাঁকে। সাকিবের দিনে মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্তও ভালো করেছেন। লিটন কুমার দাস শূন্য রানে আউট হওয়ার পর দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত ক্রিজে থাকা অধিনায়ক তামিম ইকবালের মুখ। টানা দুই ম্যাচে শূন্য করা লিটনের সিরিজে রান সাত। প্রথম দুই ম্যাচে সেট হয়ে উইকেট হারানো তামিম শেষ ম্যাচে লিটনের পর পরই ফেরেন। ১৭ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর লো স্কোরের শঙ্কায় পড়ে দল। সেখান থেকেই ধীরে এবং ধরে খেলে মুশফিক-শান্ত ১২৮ বলে গড়েন ৯৮ রানের জুটি। ভুল বোঝাবুঝিতে ৫৩ রানে রান আউট শান্ত। সিরিজ এবং ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তাঁর। এর পর সাকিব নেমে ইনিংস বড় করেন। মুশফিকের সঙ্গে ৩৮ আর আফিফের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি সাকিবের। তিনি আউট ৭৫ রানে। এই ইনিংস গড়তে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় শট খেলেন ৩৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। এর মধ্যে স্যাম কারেনের বলে দুটি সোজা ড্রাইভ শট চোখে লেগে থাকবে বহু দিন।

মিরপুরে সিরিজ জিতে নেওয়া ইংলিশদের সামনে ২৪৭ রান বড় স্কোর মনে হচ্ছিল না। স্বাগতিক বোলাররা সেটাকে বড় বানিয়ে দেন নিয়মিত বিরতিতে জুটি ভেঙে। সাকিব, মিরাজ, এবাদত, তাইজুলের সমন্বিত বোলিং তোপে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১৯৬ রানে। এ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার– বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে যে দিন বোলিং ভালো হয় আর যেদিন সাকিব ভালো খেলেন। এক এক করে উইকেট ফেলে মিরাজরা যেদিন হাইফাই করেন, সে দিনও জেতে। গতকাল দুটিই দেখা গেছে জয়ের ম্যাচে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.