আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) একদল পরিদর্শক ইরান ছেড়েছেন। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইরান আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থগিত করার পর দেশটি ছাড়লেন পরিদর্শকেরা।
গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইএইএ বলেছে, তাদের কর্মীরা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে ফিরে যাবেন।
আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, সংস্থাটি যেন আবারও পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ইরানের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করা খুবই জরুরি।
তেহরান থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার বলেছেন, ঠিক কতজন আইএইএ কর্মী ইরান ছেড়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর মতে, সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে না যে সবাই, নাকি কয়েকজন ইরান ছেড়েছেন। তবে সেরদারের ধারণা, কিছু পরিদর্শক এখনো ইরানে আছেন।
এই সংবাদদাতা বলেন, ‘তাঁরা (আইএইএ কর্মী) উড়োজাহাজে চড়েননি। সড়কপথে হয়তো গতকাল বা এর আগের দিন আর্মেনিয়ায় গেছেন। তারপর তাঁরা ভিয়েনা পৌঁছেছেন।’ তাঁর মতে, এ ঘটনা ইরানে এখন একধরনের ‘পারমাণবিক অনিশ্চয়তার যুগ’-এর সূচনা করেছে।
সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলাকালে পুরো সময়ই আইএইএর পরিদর্শকেরা ইরানের রাজধানী তেহরানে ছিলেন। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালালে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ নিহত হন। পরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়।
একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে যুক্ত হয়। তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর শক্তিশালী বোমা ফেলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অনেকটা পিছিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিমান হামলার পর ইরান জানিয়ে দেয়, তারা এখন আর জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা আইএইএর ওপর ভরসা করতে পারছে না। যদিও ইরান বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি এনপিটির প্রতি তারা এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকেই ইরানি নেতারা আইএইএর কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। তাঁরা বলছেন, আইএইএ ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানায়নি; বরং হামলার ঠিক আগের দিন ১২ জুন তারা ইরানকে দোষারোপ করে একটি প্রস্তাব পাস করে। প্রস্তাবে অভিযোগ করা হয়, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি–সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানছে না।
গত বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থগিতের নির্দেশ দেন। সংস্থাটিকে সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ রাখার এ প্রস্তাব আগেই ইরানের পার্লামেন্টে পাস হয়েছিল। পরে দেশটির সর্বোচ্চ পরিষদ ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’ সেটি অনুমোদন করে।
গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার পূর্ণ সম্মান রক্ষার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আল জাজিরা