কোনো কোনো প্রার্থী পোস্টার-মাইকিংয়ে ক্ষণে ক্ষণে নিজের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন। আবার কোনো প্রার্থী অনেকটা চুপিসারে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনের বাকি আর তিন দিন। প্রচার শেষ হবে শনিবার রাত ১২টায়। শেষ সময়েও বরিশালে মেয়র পদে আলোচনায় থাকা চার প্রার্থীর প্রচারে রয়েছে ভিন্নতা। কোনো প্রার্থী প্রচারে সরব, পোস্টার-মাইকিংয়ে ক্ষণে ক্ষণে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। আবার কোনো প্রার্থী অনেকটা চুপিসারে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত দলের বিতর্কিতদের এড়িয়ে শুধু নিজের বিশ্বস্ত লোকদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারে নামছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম তাঁর প্রচারে দলের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। অনেকটা নীরবে প্রচার চালাচ্ছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান ওরফে রূপণ। জাতীয় পার্টির (জাপা) ইকবাল হোসেন নিজের সামর্থ্যের সবটুকু নিয়েই মাঠে নেমেছেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর গত ২৬ মে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেন প্রার্থীরা। গত চার দিন বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নৌকা ও হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টার সবচেয়ে বেশি। এলাকায় এলাকায় মাইক বাজিয়ে এই দুই প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে। দলবল নিয়ে তাঁরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে টানানো পোস্টারও কিছু চোখে পড়ে। তবে পোস্টার-মাইকিংয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসানের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না।
বিশ্বস্ত কর্মী ও কেন্দ্রীয় নেতারা খায়েরের সঙ্গী
নৌকার প্রার্থী খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে প্রতিদিনই প্রচারে যোগ দিচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে প্রচারে নামেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। এর আগের দিন প্রচারে অংশ নেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস প্রমুখ। এর আগে খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনে এসেছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
নগরের সদর রোডে সার্কিট হাউসের সামনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়। গতকাল বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছেন। আগত নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক এবং দলীয় পদ থেকে ছিটকে পড়া সাবেক নেতাদের অনুসারী।
বরিশালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও দলীয় প্রার্থী তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর মধ্যকার বিরোধের প্রভাব ভোটের প্রচারেও রয়েছে। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী নেতা-কর্মী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক ও হাসানাত পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্যে ছিটকে পড়া পুরোনো নেতা-কর্মীরাই খায়ের আবদুল্লাহকে সমর্থন দিচ্ছেন। প্রচারের সময় সাদিক আবদুল্লাহ বলয়ের কোনো নেতা-কর্মীকে খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা যায় না। নিজের বিশ্বস্ত লোকজনকে সঙ্গে নিয়েই তিনি প্রচার চালাচ্ছেন।
সর্বশক্তি নিয়ে নেমেছে হাতপাখা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ফয়জুল করিমের নির্বাচনী প্রচারে দলটি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। দলের নেতা-কর্মীদের মেয়র প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে এবং মনোযোগ একদিকে রাখতে কোনো ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়নি ইসলামী আন্দোলন।
গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর আমতলা মোড় এলাকায় গণসংযোগে নামেন হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করিম। দেখা যায়, ফয়জুল করিমের সঙ্গে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। দুটি হ্যান্ডমাইক বাজিয়ে ভোট চাইছেন কর্মীরা। প্রার্থী লোকজনের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, কোলাকুলি করছেন আর কর্মীরা লিফলেট বিতরণ করছেন।
বরিশাল জিলা স্কুল মোড় থেকে আমতলা পানির ট্যাংকি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব। গতকাল বেলা তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত এই সড়কে অবস্থান করে দেখা যায়, প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর হাতপাখায় ভোট চেয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়কের এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত চক্কর দিচ্ছে।
বরিশাল নগরে ৩০টি ওয়ার্ডে হাতপাখার প্রচার চালাতে আইন অনুযায়ী ৩০টি প্রচার মাইক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ আছে, মাইক চলছে আরও বেশি। হাতপাখার পক্ষে প্রচারে নেমেছেন কয়েক হাজার কর্মী। বরিশাল বিভাগের সব জেলা ও উপজেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা বরিশালে অবস্থান নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। এতে দলটি প্রচারে এগিয়ে আছে অন্যদের থেকে।
নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে নারী ভোটাররা একটি বড় ভূমিকা রাখেন। ইসলামী আন্দোলনের ছয় শতাধিক নারী কর্মী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব জাকারিয়া হামিদী বলেন, দলীয় প্রধানের নিজের এলাকা হওয়ায় বরিশালের নির্বাচনে সংগঠনের সর্বশক্তি নিয়োগ হবে, এটাই স্বাভাবিক।
নীরবে প্রচার চালাচ্ছেন কামরুল
গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দক্ষিণ রূপাতলী এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ জন নেতা-কর্মী। তিনি প্রতিদিনই প্রচারে নামছেন অল্প কয়েকজন নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে অনেকটা নীরবে। ভোটারদের কাছে গিয়ে বরিশালের বিএনপিদলীয় প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে হিসেবেই ভোট চাইছেন।
কামরুল বলেন, ‘অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনা করলে আমি প্রচারে পিছিয়ে সেটা ঠিক। আমি নিজের মতো করেই প্রচার চালাচ্ছি।’
প্রার্থীদের স্ত্রীরাও নেমেছেন মাঠে
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ইসমত আরা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসানের স্ত্রী হুমায়রা মিরাজ—তিনজনই পেশায় গৃহিণী। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে নেমে তাঁরা স্বামীর পক্ষে ভোটারদের মধ্যে ভিন্ন রকম সাড়া ফেলেছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে এবার ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার পুরুষের তুলনায় বেশি। নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন।