মিঠুন কুমার দাসের বাড়ি ফরিদপুর সদর থানার কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামে। ভিটাবাড়ি ছাড়া কোন জমি নাই মিঠুনদের। বাবা বর্গা চাষ করে জীবন ধারণ করেন। মিঠুনের মা গৃহিণী, তবে কৃষি কাজে সাহায্য করেন। অভাব অনটনের সংসারে মিঠুন নিজেও দিনমজুরি কাজ করে পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারপরও থেকে থাকেননি তিনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে পড়াশোনা করে ২০১২ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। প্রথম আলোর ফরিদপুর প্রতিনিধি তাকে নিয়ে প্রতিবেদন পাঠান। পরে তার পার বারিক অবস্থা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসি দুই বছর শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে। শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করে পুনরায় সাফল্য ধরে রাখেন, এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পান। তাঁর এই সাফল্যে স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখে এই তহবিল।
প্রথমে ২০১৪-১৫ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (ব্যবস্থাপনা) বিভাগে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়ি চলে আসেন। পরে একই বছর ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বিবিএ (হিসাববিজ্ঞান) তে ভর্তি হন। এখান থেকে ২০১৮ সালে স্নাতক ও ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ বছর ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ক্রেডিট চেকিং কাম-সায়রাত সহকারী হিসেবে ১২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ফলাফলে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। গত বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। এখন প্রশিক্ষণ চলছে।
মিঠুন জানান, প্রথম সরকারি চাকরির অনুভূতিটাই আলাদা। সেই সঙ্গে আমার কষ্টের জীবনের সঙ্গী ছিল ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট। জীবনে তাদের অবদান কখনো ভোলার মতো নয়। আমার জীবনে প্রথম আলো যেন সূর্যের মতো এসে আলোকিত করেছিল। আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি।’
বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মিঠুন বলেন, পরিশ্রমী হোন, নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন, ধৈর্য ধারণ করুন। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সফলতা আসবেই। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন। জীবনে অনেক পথ হাটতে হবে।’