সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যা

মার্কিন ভিসা নীতি

0
196
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ফাইল ছবি

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপরও ভিসা নীতি প্রয়োগ হতে পারে বলে সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁকে চিঠি দিয়েছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। জবাবে পিটার হাস সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের বিষয়ে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, গণমাধ্যমকে কেউ মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নিলে তার ক্ষেত্রেও ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে।

সম্পাদক পরিষদের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। আজ শনিবার এই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনামের চিঠির জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো সরকারের সমালোচনামূলক মতামতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমাদের নীতির যেকোনো বিষয়ে জনমতের প্রতিফলনকে আমরা স্বাগত জানাই।’
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমও মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন পিটার হাস।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে পিটার হাস বলেছিলেন, তাঁরা ভিসা নীতি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে যে কারও বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছেন। তাঁরা সরকার সমর্থক, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও সেটা মিডিয়াও হতে পারে।

চলতি বছরের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ২৭ সেপ্টেম্বর পিটার হাসকে চিঠি দেন। ই–মেইলে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে তাঁর মনে এবং সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। সত্যি বলতে ওই মন্তব্য (গণমাধ্যম নিয়ে পিটার হাসের মন্তব্য) তাঁদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তাই এ বিষয়ে ব্যাখ্যার অনুরোধ জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সব সময় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে অটল। সেখানে এই মন্তব্য তাঁদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।

মাহ্ফুজ আনাম লেখেন, ‘গণমাধ্যমের কাজ হলো লেখা কিংবা সম্প্রচার করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাংবাদিক যা লেখেন বা সম্প্রচার করেন, তার ওপর ভিত্তি করে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কি না? যদি তাই হয়, তাহলে এটি কি বাক্‌স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আওতায় আসে না? গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এখানে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে?’

মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী সব সময়ই ব্যক্তিগতভাবে তাঁর এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। সে ক্ষেত্রে ভিসা নীতি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে এই নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনীর মূল্যবোধ এখানে কীভাবে প্রতিফলিত হবে?’

এর জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে চায়, তাদের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে পিটার হাস বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম—সবার। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে।

পিটার হাস বলেন, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ওই বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে ভিসা নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়, এমন যেকোনো বাংলাদেশির জন্য প্রযোজ্য। গণমাধ্যমকে কেউ মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নিলে তার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.