বিজয়ের ৫৪ বছর উদযাপন করতেই আয়োজন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ সর্বজনীন কনসার্টের। বিএনপির আয়োজনে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মহান বিজয় দিবসের উন্মুক্ত কনসার্ট শুরু হয় সোমবার বেলা ২টায়। জমকালো এই আয়োজনে মাতোয়ারা হয় লাখো জনতা। কনসার্টের উন্মাদনা চলে রাত এগারোটা পর্যন্ত।
মঞ্চ মাতান ব্যান্ডের মধ্যে নগরবাউল, ডিফারেন্ট টাচ, আর্ক ব্যান্ড, সোলস, শিরোনামহীন, আর্টসেল, অ্যাভয়েড রাফা ও সোনার বাংলা সার্কাস এবং এককে সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশিদ আলম, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, আলম আরা মিনু, মনির খান, আসিফ আকবর, কণা, ইমরান, প্রীতম, মৌসুমী ও জেফারসহ অনেকে।
শিল্পীরা যখন গানে গানে মাতোয়ারা করছেন শ্রোতাদের, তখন রঙিন আতশবাজিতে আলোকিত হয়ে ওঠে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের আকাশ। দর্শকদের চাপে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও একের পর এক গানে মেতে ওঠে আগত সবাই।
শুরুর দিকে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে একপর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে দর্শক। জনস্রোতে ভেঙে পড়ে মিডিয়া কাভারেজ মঞ্চ। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। এতে যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরেফিন শাকিলসহ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, নিউজ২৪, মাছরাঙা, এটিএন নিউজসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।
তবে সব ছাপিয়ে দেশের সংগীত অঙ্গনের পরিচিত সব শিল্পীর গানে ফেরে স্বস্তি। শুরুতে গান পরিবেশন করেন শিল্পী নাসির খান। এরপর বেলা সোয়া দুইটার দিকে সংগীত পরিবেশন করেন প্রীতম হাসান। তিনি ‘খোকা’, ‘হাতে লাগে ব্যথারে’ ও ‘উরাধুরা’ গানগুলো গেয়ে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মাত করেন।
প্রীতমের পর মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন কনকচাঁপা। ‘সাগরিকা, বেঁচে আছি তোমারই ভালোবাসায়’ গানটি দিয়ে তার পরিবেশনা শুরু করেন। তিনি তার জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি গান একে একে পরিবেশন করেন।
এরপর মঞ্চে উঠেন সুরকার-শিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমী। তারা গেয়েছেন ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ গানটি। এরপরই গান শোনান আলম আরা মিনু। ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’, ‘সোনা দানা দামি গহনা’ গান গেয়ে তিনি মাইক্রোফোন তুলে দেন মনির খানের হাতে। সেসময় ‘চিঠি’ ও ‘প্রেমের তাজমহল’ গান গেয়ে দর্শক মাতান তিনি।
এভাবে পর্যায়ক্রমে ইলিজা পুতুল, গোলাপি, আলিয়া বেগম ও চিশতি বাউলরা গান পরিবেশন করেন। বিকাল ৫টার পর গান করেন সঙ্গীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল ও কনা। গোটা সড়ক জুড়ে তখন উন্মাদনা দর্শকের কণ্ঠেও। কনসার্ট উপভোগ করতে আসা কেউ কেউ সড়কের পাশের গাছে চড়ে বসে গানে মাতোয়ারা হয়ে যান।
এরপর মঞ্চে আসতে থাকে বাংলাদেশের বিখ্যাত সব ব্যান্ড। রাত সাড়ে নয়টার দিকে মঞ্চে উঠেন নগরবাউল জেমস। দর্শকের কাছে ‘গুরু’খ্যাত শিল্পী জেমস ‘মা’, ‘দিওয়ানা মাস্তানা’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মীরাবাঈ’, ‘আসবার কালে আসলাম একা’সহ জনপ্রিয় সব গান দরাজ কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন। চিরচেনা ভঙ্গিতে মাতান সঙ্গীতপ্রেমি খ্যাপাটেদের। রাতে বাড়ে, এরপর মুগ্ধতায় সমাপ্ত হয় ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ কনসার্টের।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামের নতুন এক প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মটির আহ্বায়ক বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এই প্ল্যাটফর্ম ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের পর বিদেশি অপশক্তি ও সংস্কৃতির আগ্রাসন রুখে দিয়ে দেশীয় গান ও শিল্পীদের উৎসাহিত করবে বলে জানান তিনি।