আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ ঘিরে রাজধানীতে পশুর হাটগুলোতে বেচাবিক্রি বেশ জমে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার একাধিক হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে সকালে ক্রেতা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। রাতে হাটগুলোতে ক্রেতার ভিড় লেগে যায়। ঈদের আগের দিন আজ বুধবার পশুর হাট আরও জমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পশুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের এখনো অসন্তোষ রয়ে গেছে। তাঁরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে চাইছেন না। আর ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, অনেক ক্ষেত্রে কেনা দামও বলছেন না ক্রেতারা।
বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠের হাটটিতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে গেছে রাস্তায়। মাঠের ভেতর জমেছে কাদাপানি। এসব মাড়িয়েই চলছে দর-কষাকষি ও বেচাকেনা।
ওই হাটে গরু নিয়ে আসা জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাইকার ইমদাদ আলী বলেন, ‘লাভের লাইগা হাটে গরু আনছি। কিন্তু মানুষ এক গরুতে ১০-১৫ হাজার টাকা কম কয়।’ ইমদাদ জানালেন, হাটে বিক্রির জন্য মোট ৫৫টি গরু এনেছেন। কিন্তু বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ১০টি।
হাটটি থেকে ছোট আকারের একটি গরু কেনেন শাহিনবাগের বাসিন্দা ইফতেখার রহমান। প্রায় দেড় মণ ওজনের গরুটি তিনি ৬৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই কোরবানির গরুর জন্য ৬০-৭০ হাজার টাকা বাজেট রাখি। গতবার এই দামের মধ্যেই আরেকটু বড় আকারের গরু কিনতে পেরেছিলাম।’
তেজগাঁও হাটে ১৭টি গরু নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছিলেন বাবুল ইসলাম। গতকাল বিকেল পর্যন্ত তাঁর ১৩টি গরু বিক্রি হয়েছে। বিক্রি হওয়া সব কটি গরুই ছিল ছোট ও মাঝারি আকারের। তবে ২০ থেকে ২২ মণ ওজনের বড় আকারের যে চারটি গরু এনেছিলেন, সেগুলো বিক্রি হয়নি। বাবুল ইসলাম বলেন, ‘ওই গরুগুলোর জন্য দাম চাইছি ছয় লাখ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। এই দামে বেচলে পথে বসা লাগব।’
তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ হাটের ইজারাদার হোসেন খান বলেন, বেশি দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরাও গরুর দাম ছাড়ছেন না। আজ (মঙ্গলবার) বিকেলের দিকে ক্রেতা আসতে শুরু করায় বেচাবিক্রিও হচ্ছে। হাটে প্রায় চার হাজার গরু উঠেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটের প্রায় দেড় হাজার গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু ওঠায় দিয়াবাড়ি হাটের নির্ধারিত স্থান বউবাজার এলাকা ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের নিচ পর্যন্ত পাইকারেরা গরু-ছাগল রাখতে শুরু করেছেন। ওই হাটে ইজারাদারের প্রায় ১৫ হাজার পশু রাখার প্রস্তুতি ছিল।
ওই হাটের স্বেচ্ছাসেবক ও পাইকারেরা জানান, সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে হাটে তেমন ক্রেতা ছিল না। তবে দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে বিক্রির পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে সেখানেও পশুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টি দেখা গেছে।
দিয়াবাড়ি হাটে দুই ছেলেকে নিয়ে পছন্দের গরু বাছাই করছিলেন উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা নাসিরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, মাঝারি আকারের গরু কেনার ইচ্ছে আছে। বাজেট ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখের মধ্যে। কিন্তু পছন্দের সেসব গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। তিনি অন্তত ৭ জন পাইকারের সঙ্গে দরদাম করেছেন বলে জানান।
দিয়াবাড়ি হাটের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা আরিফ হাসান গতকাল রাত আটটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, হাটে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক গরু এসেছে। সারা দিন ক্রেতা কম থাকলেও সন্ধ্যার দিকে বিক্রি জমে উঠেছে। রাতে হাটটিতে প্রচুর ক্রেতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাটের সার্বিক পরিস্থিতি তদারক করতে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বছিলা হাটে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ। তিনি মুঠোফোনে বলেন, হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু রয়েছে। সেই তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি কিছুটা কম। ওই হাটে প্রায় ১০ হাজার কোরবানির পশু উঠেছে বলেও জানান তিনি।
এবার রাজধানীতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে পশুর হাট ছিল ২০টি। এর মধ্যে ১৮টি ছিল অস্থায়ী হাট। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত এসব হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে।