সড়কে ধীরগতি, যানজট, ট্রেনের সূচিতে উন্নতি

0
117
ঈদে বাড়ি ফিরছে মানুষ, ঢাকা থেকে যাত্রার পরই দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি। শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় থেকে তোলা

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে গতকাল শুক্রবার ধীরগতিতে চলেছে গাড়ি। ঢাকা-উত্তরাঞ্চল মহাসড়কে দিনভর থেমে থেমে হয়েছে যানজট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে এবং টোলের কারণে ঢাকা-মাওয়া রুটে এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশেও যানজট ছিল। তবে আগের দুই দিনের তুলনায় উন্নতি হয়েছে রেলের সময়ানুবর্তিতায়। এ দিন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে অধিকাংশ ট্রেন ছেড়েছে শিডিউল মেনে।

দীর্ঘ যানজট না হলেও বাজার, পশুর হাট, দুর্ঘটনা এবং মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলায় গাড়ির গতি কম ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন মহাসড়কে। এতে ঢাকায় বাস ফিরতে দেরি হওয়ায় ফের যাত্রা করতেও বিলম্ব হচ্ছে। এতে বাস কাউন্টারে অপেক্ষার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সেইসঙ্গে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তো রয়েছেই।

সরকারি অফিসে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয় ঈদের ছুটি। ফলে সেদিন দুপুর থেকেই সড়কে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। শিল্পকারখানাসহ অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হবে আজ শনিবার কাজ শেষে। তাই আজ বিকেল থেকে সড়কে যাত্রীর ঢল নামতে পারে।

পশুবাহী গাড়ি ও হাটের কারণে কিছু যানজট হয় জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ এড়ানো কঠিন। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নজরদারি বাড়াতে হবে। সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট নেই।’ রাস্তার কারণে যানজট হবে– এমন পরিস্থিতি দেশে নেই বলেও দাবি করেন তিনি। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

ঢাকা ছাড়তেই ভোগান্তি 
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী এলাকায় হাজারো যাত্রীর ভিড় দেখা যায়। টার্মিনালের পাশেই পশুর হাট। সেখানে আসা ট্রাক মিরপুর সেতু পেরিয়ে ডান দিকে মোড় নেওয়ায়, মহাসড়কমুখী বাস আটকে যাচ্ছে দীর্ঘ সিগন্যালে। দুপুর ২টার দিকে মহাখালী টার্মিনালেও ছিল যাত্রীর ভিড়; কিন্তু বাস নেই। এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান জানান, যানজটে বাস ফিরছে দেরিতে। এতে ফিরতি যাত্রাতেও দেরি হচ্ছে। বাস না থাকায় টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়।

সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং পদ্মা সেতুমুখী বাসের যাত্রীরা জানান, ঢাকা ছাড়তেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল হানিফ ফ্লাইওভার, কাঁচপুর এলাকায় দিনভরই গাড়ির তীব্র চাপ ছিল।

মহাসড়কের কোথাও যানজট, কোথাও ধীরগতি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় গাড়ির তীব্র চাপে গতকাল ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও যানজট হয়। এ দিন সকালে টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর ছনবাড়ী এলাকা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির সারি ছিল। মোটরসাইকেল বুথ ছাড়াও সাতটি বুথে টোল নিয়েও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছিল না। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল ইসলাম জানান, সেতুর মাওয়া প্রান্তের ওজন স্টেশনের লোকজনের অবহেলার কারণে ট্রাকের সারি তৈরি হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট হয়েছে।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী (টোল) রাজন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঈদের পাঁচ দিনের ছুটির প্রথম দিনে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশি। চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোর ৬টার দিকে কালিহাতীর পৌলীতে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে যায়। ফলে এলেঙ্গা থেকে সদর উপজেলার শহর বাইপাস আশেকপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর সাজেদুর রহমান জানান, ট্রাকটি সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোর থেকে চৌরাস্তা, বোর্ডঘর, নাওজোড়, কোনাবাড়ী, মৌচাক, সফিপুর, পূর্ব চান্দরা, বাড়ইপাড়া জিরানী, আশুলিয়ার কবীরপুর, বাইপাইল এলাকায় যাত্রীর ভিড় বাড়ে। অনেক যাত্রী বাসে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, সফিপুর উড়াল সড়ক থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত থেমে থেমে চলছে গাড়ি। যাত্রীরা কেউ বাসে, কেউ ট্রাক, পিকআপ বা ফিরতি পশুবাহী ট্রাকেও বাড়ি ফিরছেন। নগর পুলিশের সহকারী উপকমিশনার (ট্রাফিক) অশোক কুমার পাল বলেন, ভোগড়া বাইপাস থেকে ময়মনসিংহমুখী এবং ঢাকামুখী লেনে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে।

এ দিন বিকেলে পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে কোনো যানবাহনে না যেতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে অনেকে ট্রাকে করে ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে চড়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে দুর্ঘটনা ঘটে মহাসড়কে যাতায়াতে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। তাই আমরা রাস্তায় আছি। যেখানে বেশি যানজট আছে, সেসব এলাকায় পুলিশ যানবাহন আটকাচ্ছে না। কিন্তু যেখানে খালি জায়গা রয়েছে, সেখানে যাত্রী তোলা ট্রাক আটকাব। জরুরি পণ্যবাহী হলে ট্রাক যেতে দেব।’ নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি পরিবহন মহাসড়কে চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, বেতন-ভাতার দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে চান্দিনায় ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের আশ্বাসে শ্রমিকরা দেড় ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলেও দিনভর ধীরগতি ছিল মহাসড়কে। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের সুপার খাইরুল আলম বলেন, সকাল থেকে চান্দিনায় সড়কে অবরোধ ছিল, অন্যদিকে জুমার নামাজের পর সড়কের উভয় লেনে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে থেমে থেমে যানজট হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে সকাল থেকে থেমে থেমে যানজট হয়েছে। এই দুই স্থানে সড়কের দুই পাশে দোকানপাট অপসারণ করা হচ্ছে। এতে গাড়ির গতি কমেছে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিতে সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবারও এসব এলাকায় সড়ক ভালো ছিল। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে মহাসড়কের পাশে হাটের কারণেও যানজট হয়।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে গতকাল সকাল থেকেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। শনিবার ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রেনে শিডিউলের উন্নতি
ইঞ্জিন ও বগি সংকট এবং উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি বন্ধ থাকায় মাসখানেক ধরেই রেলে শিডিউল বিপর্যয় চলছে। ঈদে তা চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা ছিল।    বুধবার ১৫টি এবং বৃহস্পতিবার আটটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পরে যাত্রা করেছিল কমলাপুর থেকে। তবে গতকাল রেলের হিসাবে এ সংখ্যা তিনে নেমে এসেছে।

গতকাল রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট বিলম্বে বিকেল সোয়া ৪টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্ব করে চিলাহাটি এক্সপ্রেস। পঞ্চগড়গামী ট্রেন ৫৫ মিনিট বিলম্বে যাত্রা করে। এ ছাড়া রংপুর এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ৫ থেকে ৪৫ মিনিট বিলম্ব করেছে। যদিও রেলওয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্বকে সঠিক সময়ে যাত্রা বলে গণ্য করে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ইঞ্জিন ও বগির সংকটসহ নানা ঘাটতি থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে। শনিবার যাত্রীর চাপ বাড়লেও তা রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.