সচিবালয়ের ভেতরে ‘পদোন্নতিবঞ্চিত’, বাইরে চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ

0
61
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত যাঁরা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁরা আজ সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে, ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ভেতরে–বাইরে বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পুলিশ ও প্রশাসনে নানাভাবে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে কেউ আছেন চাকরিচ্যুত, কেউ ‘পদবঞ্চিত’, আর একদল পিএসসির সুপারিশ পেয়েও চাকরি না পাওয়া।

আজ রোববার সচিবালয়ের বাইরে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চাকরিচ্যুত পুলিশের কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদের ব্যক্তিরা। অন্যদিকে সরকারি কর্মকমিশন থেকে বিসিএস ২৮তম ব্যাচ থেকে ৪২তম ব্যাচে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও নিয়োগবঞ্চিতরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জড়ো হন। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘পদোন্নতিবঞ্চিত’ কর্মকর্তারা তাঁদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় একদল ছাত্র-জনতা বর্তমানে কর্মরত সচিবদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় গত সোমবার (৫ আগস্ট)। এরপর তিন দিন দেশে সরকার ছিল না। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। শুক্র ও শনিবার ছুটির পর আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সবার চোখ ছিল সচিবালয়ের দিকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যাঁরা ছিলেন, সোমবারের পর থেকে তাঁরা অফিসে আসছেন না। অন্যদিকে যাঁরা ১৫ বছর ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা মঙ্গলবার থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ জানাচ্ছেন। আজও সকাল থেকে তাঁরা তাঁদের অবস্থান জানান দেন। এরই মধ্যে পদোন্নতিবঞ্চিতরা একটি তালিকা তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের সময় দায়িত্ব পালন করা সচিবদের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে আজ বেলা ১১টায় সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল ছাত্র-জনতা। এ সময় তাঁরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা সচিবদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। সচিবদের অপসারণের দাবি করেন তাঁরা।

সচিবালয়ের প্রথম গেটে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা গেট বন্ধ করে দেন। এ সময় কিছু সময়ের জন্য সচিবালয়ের সামনে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাঁরা সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অন্যদিকে দুপুরের দিকে ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিতরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি নিয়োগবঞ্চিত করা হয় ৩৩তম বিসিএসে, এই সংখ্যা ১১৩ জন। এ ছাড়া ৩৯তম বিসিএসে ৬৯ জন, ৩৬তম বিসিএসে ৬৯ ও ৩৭তম বিসিএসে ৬১ জনকে নিয়োগবঞ্চিত করা হয়। তাঁরা বলছেন, পিএসসি থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাঁদের নিয়োগবঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁদের নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

৩৫তম বিসিএসে পিএসসি থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত মনিরুল হক জানান, ২৮তম ব্যাচ থেকে ৪২ ব্যাচে পিএসসি থেকে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪১৬ জনকে নিয়োগ দেয়নি। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে তাঁদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারি সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আদালত থেকে তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেয়নি।

আরেক সুপারিশপ্রাপ্ত মুনমুন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবাই এখন সরকারি অন্য দপ্তরে চাকরি করছি। একই ব্যক্তি বিসিএসে চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সেই ব্যক্তি সরকারি আরেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের হলে আমাদের চাকরি হয়েছে কীভাবে?’

আরেক সুপারিশপ্রাপ্ত মীর ফয়সাল জানান, তাঁদের দাবি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বকেয়াসহ নিয়োগ দেওয়া। তিনি বলেন, গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত যাঁরা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁরা চাকরি ফিরে পেতে বেলা সাড়ে তিনটায় সচিবালয়ের সামনে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন।

মহিদুল ইসলাম নামের এক কনস্টেবল বলেন, তাঁকে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি চাকরি ফেরত চান। সিআইডির সাবেক এএসআই সাদ্দাম হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের বিভিন্ন পদে প্রায় এক হাজার জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এঁদের কারও বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ, কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাঁরা চাকরি ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সচিবালয়ে এসেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.