
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও আন্দোলন অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিষয়টিকে ‘জনগণের আন্দোলন’ আখ্যা দিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবালয়ে।
এদিকে আন্দোলনকারীদের হামলায় ভাঙ্গার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, থানা ও হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, তিনি ‘ফ্যাসিস্ট’ ধরতে চান।
ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪–এর অন্তর্ভুক্ত রাখার আবেদন জানিয়ে ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর গতকাল সোমবার একটি চিঠি দিয়েছেন ডিসি মো. কামরুল হাসান মোল্লা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেটে ফরিদপুর-২ ও ফরিদপুর-৪ আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর থেকেই ভাঙ্গার সাধারণ মানুষ সড়ক, রেলপথ অবরোধসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিস, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
জেলা প্রশাসক লিখেছেন, ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে আলাদা করে ফরিদপুর-২–এ যুক্ত করায় ফরিদপুর-৪ ও ফরিদপুর-২ আসনের সাধারণ মানুষই ক্ষুব্ধ। এতে বৃহত্তর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা আছে। তাই আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ফরিদপুর-৪–এ অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলো।
আন্দোলনের সময় সহিংসতায় ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ, ইউএনও কার্যালয়সহ অন্তত ২০টি সরকারি দপ্তর ও ২টি থানায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়। গতকাল রাত ৮টার দিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। মধ্যরাতে ঢাকায় ফেরার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা ফ্যাসিস্ট, তাদের আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব। ইতিমধ্যে আমি তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি।’
গতকালের ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম প্রায় থমকে গেছে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান আজ মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘আমাদের কোনো টিম সড়কে নেই। আমাদের একটি অ্যাম্বুলেন্স, তিনটি গাড়ি ও সার্জেন্টদের মোটরসাইকেল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন টহলের মতো কোনো যানবাহন সাপোর্ট নেই, থানার কার্যক্রম স্থবির।’
এদিকে হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এক ফেসবুক বার্তায় ভাঙ্গাবাসীর পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দাবিগুলো মেনে নিন, আমরা ঘরে ফিরে যাই।’
দাবিগুলো হলো আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ভাঙ্গা উপজেলাসহ ফরিদপুর-৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা; চেয়ারম্যানসহ সব আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া; নিরীহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা; নতুন করে কোনো মামলা না দেওয়া এবং রাতের বেলায় প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করা।

মহাসড়ক অবরোধ প্রতিহত করা হবে: জেলা প্রশাসক
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা বলেছেন, ‘ভাঙ্গার সংসদীয় আসনের বিষয়ে ইতিমধ্যে উচ্চতর আদালতে রিট হয়েছে এবং আগামী ২১ সেপ্টেম্বর রিটের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আমরা আশা করছি ওই দিন ভালো কিছু পাব। পাশাপাশি এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা একটা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি গতকাল সোমবার।’
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাঙ্গা গোলচত্বর এলাকায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘তবে এ দাবিতে ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করা যাবে না। অবরোধ করার উদ্যোগ নিলে আমরা তা প্রতিহত করব।’
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, গতকাল সোমবার ভাঙ্গায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তা ছিল একটি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে কাজ করছে পুলিশ। নাশকতাকারীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ভাঙ্গার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
পরে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আজ সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে। কোনো জায়গা থেকে অবরোধের কোনো খবর আমরা পাইনি।’