শ্রমিকনেতা হত্যার নেপথ্যে দুই সংগঠনের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব

0
199

গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামকে হত্যার পেছনে দুই শ্রমিক সংগঠনের ‘পারস্পরিক ক্ষমতা’র বিরোধকে কারণ হিসেবে দেখছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, শহিদুলের ওপর হামলাকারীরা নিজেরাও একটি শ্রমিক সংগঠনের লোক। তাঁরা কাজ করেন টঙ্গীতে। এর মধ্যে শহিদুল হঠাৎ সেখানে শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করতে গেলে পারস্পরিক ক্ষমতার বিরোধ দেখা দেয়। এর জেরে শহিদুলের ওপর হামলা চালালে তাঁর মৃত্যু হয়।

তবে শহিদুলের পক্ষের লোকজনের দাবি, এটা পরিকল্পিত হত্যা। হত্যাকারীরা সবাই কারখানার মালিকপক্ষের লোক। শ্রমিকদের পাওনা টাকা মেরে খেতে বা প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতেই ওইসব লোকজনকে ভাড়া করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এখানে ক্ষমতার কোনো বিরোধ নেই।

গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ নামের একটি কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হন শহিদুল। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। এ ঘটনায় সোমবার সকালে সংগঠনের পক্ষ থেকে টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাতজনের নামে মামলা করা হয়। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মে মাসের বকেয়া বেতন, ঈদের বোনাস ও চলতি জুন মাসের বেতন নিয়ে কারখানাটিতে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। গত রোববার সব পাওনা টাকা পরিশোধ করার কথা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সারা দিন পার হয়ে গেলেও শ্রমিকেরা টাকা পাননি। খবর পেয়ে কারখানাটিতে যান শহিদুল ও তাঁর লোকজন। পাওনা বুঝে পেতে শ্রমিকদের করণীয় সম্পর্কে বোঝান। পরে কারখানাটি থেকে বের হতেই হঠাৎ তাঁদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় মাজাহারুল, সোহেল, রাসেল, রিপন, আকাশ, হানিফসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে সাতজন। পরে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান শহিদুল।

এ ঘটনায় সোমবার রাতেই ১ নম্বর আসামি মাজাহারুলকে গ্রেপ্তার করে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ। মাজাহারুলের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মাজাহারুল পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নামের একটি শ্রমিক সংগঠনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক। আসামিদের মধ্যে রিপন একই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক। আর অন্যরা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা সাধারণত টঙ্গীর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন। গত রোববার হঠাৎ করেই প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় শহিদুলকে আসতে দেখে তাঁরা ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে কারখানা থেকে বের হলে শহিদুলকে মারধর করেন তাঁরা।

তবে পুলিশের এ কথার সঙ্গে একমত নন শ্রমিক সংগঠন দুটির নেতারা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, হত্যাকারী ব্যক্তিরা সবাই মালিকপক্ষের লোক, এটা পানির মতো পরিষ্কার। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতেই শহিদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখানে কোনো ক্ষমতার বিরোধ নেই।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তুহিন চৌধুরীও। তবে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাকে ‘সাজানো নাটক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারখানার মালিক মো. সাইফুদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাহ আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা শ্রমিক সংগঠনের আঞ্চলিক ক্ষমতার বিরোধকেই এ ঘটনার মূল কারণ হিসেবে দেখছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.