গতকাল প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন ইমানুয়েল মাখোঁ। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে তিনি এই সফর করছেন। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ বিশ্বের সমৃদ্ধির জন্য দু’দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নয়াদিল্লি থেকে রাত ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমানুয়েল মাখোঁকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তাঁর সফরে স্যাটেলাইটসহ দুটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও একটি সম্মতিপত্র সইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দু’দিনের সফরে এসেছেন তিনি।
ভোজ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের একাধিক সংকট মোকাবিলায় দু’দেশের অংশীদারিত্ব অর্থবহ শক্তি হতে পারে। ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সবার অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ফ্রান্স বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। আমরা শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছি।
ভোজ সভায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলের তোড়া দিয়ে মাখোঁকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
আজ সোমবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এর পর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। এ সময় সমঝোতা স্মারক সই এবং পরে যৌথ প্রেস ব্রিফিং হবে। এর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অপরাহ্ণে তাঁকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় জানাবেন।
এর আগে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ইমানুয়েল মাখোঁর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্যাটেলাইট-সংক্রান্ত ও এয়ারবাসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে। নগর উন্নয়নে একটি সম্মতিপত্র সইয়ের প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে।
এ ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে, তবে সেগুলো চূড়ান্ত হয়নি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক, সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ইউরোপে বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে ফ্রান্স। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) দেশটির বেশ প্রভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকা মানে ইইউ পাশে থাকা। ইইউ পাশে না থাকলেও ফ্রান্স অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চলতি বছর দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দেওয়া যৌথ ঘোষণার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে সে দেশ সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি ইমানুয়েল মাখোঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সে সময় দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্মতিপত্রে সই করে। এতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয় রয়েছে।
ওই সময় দেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। প্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী এক পক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অন্য পক্ষ তা সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। দু’পক্ষ রাজনীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনিময়সহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্স আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতায় জোর দিয়েছে।
ঢাকার ফরাসি দূতাবাস জানায়, ইমানুয়েল মাখোঁর বাংলাদেশ সফরকালে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বা ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ফ্রান্সের কৌশল বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। জলবায়ু নিয়ে প্যারিস এজেন্ডাসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।