তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার প্রার্থী হন। সেবার হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর বার্ষিক সঞ্চয় ছিল শূন্যের কোঠায়। ধারদেনা করে ওই নির্বাচনের খরচ জুগিয়েছিলেন। ছিল না বৈদেশিক মুদ্রা, কোম্পানির শেয়ার। কৃষি-অকৃষি মিলিয়ে জমি ছিল নিজের ৫১ শতক, স্ত্রীর ১৫ শতক। হাতে নগদ অর্থ ছিল নিজের ৩০ হাজার, আর স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে ছিল নিজের ২০ হাজার ও স্ত্রীর ১০ হাজার টাকা। গাড়ি ছিল না। বাসগৃহ হিসেবে উল্লেখ ছিল সিংড়ার পৈতৃক একতলা বাড়ি, যার মূল্য ১০ লাখ টাকা।
সেই নির্বাচনে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পরের দুটি সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও একই আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এবারের দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, শূন্য সঞ্চয়ের সেই জুনাইদ আহ্মেদ এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। তাঁর স্ত্রীও কোটি টাকার মালিক। স্বামী-স্ত্রীর ভূসম্পত্তিও বেড়েছে বহুগুণ।
জুনাইদ আহ্মেদ এবার নিজের নামে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৮২ হাজার ৪৪৫ টাকার সম্পদের হিসাব উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে স্ত্রীর নামে ৪ কোটি ৩ লাখ ৭৫৩ টাকার হিসাব তুলে ধরেছেন। জুনাইদ আহ্মেদের হাতে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ১১২ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে ১০ হাজার ইউএস ডলার, ব্যাংকে জমা আছে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫০ টাকা। সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ৩০ লাখ টাকার। এফডিআর রয়েছে ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৫১৫ টাকার। স্ত্রীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯১ টাকা, ব্যাংকে আছে ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮০৬ টাকা। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ৪৫ লাখ টাকার। রয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ টাকার এফডিআর। এ ছাড়া জুনাইদ আহ্মেদের রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি শটগান ও একটি পিস্তল।
জুনাইদ আহ্মেদের স্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে বহুগুণ। এখন তাঁর নামে রয়েছে ২৪৩ শতক কৃষিজমি ও সাড়ে ৬৬ শতক অকৃষি জমি এবং একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। ২০১৮ সালে স্ত্রীর নামে সোনা ছিল ৬৯ ভরি। এবার স্ত্রীর নামে সোনা দেখানো হয়েছে ৩০ ভরি। জুনাইদ আহ্মেদের নামে সোনা আছে দুই ভরি।
ঢাকার শেওড়াপাড়ায় জুনাইদ আহ্মেদের নিজের নামে বর্তমানে দুটি দোকান আছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। পূর্বাচলে রাজউক প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট আছে। স্বামী-স্ত্রী দুজন দুজনের দুটি বাড়িতে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১ হাজার ৭২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে, যার মূল্য জানা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিংড়ার পৈতৃক বাড়ি দোতলা করা হয়েছে।
বার্ষিক আয়ের উৎস কৃষি খাত থেকে জুনাইদ আহ্মেদের আয় ৪৮ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ৬০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৪ টাকা, প্রতিমন্ত্রীর বেতন থেকে আয় ২১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া তিনি টকশো করেও বছরে ২ লাখ ২ হাজার টাকা আয় করেন। স্ত্রীর বার্ষিক আয় কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৯০ টাকা, বাড়িভাড়া থেকে আয় ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ও সঞ্চয়পত্র থেকে আয় ১১ লাখ ২৩৭ টাকা।
২০১৮ সালে জুনাইদ আহ্মেদের গাড়ি ছিল ৭০ লাখ টাকার একটি এসইউভি, স্ত্রীর একটি গাড়ি ছিল নিশান এক্সট্রেইল মডেলের এসইউভি, যার মূল্য ৪৫ লাখ টাকা। তবে এবারের হলফনামায় কেবল একটি গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এসইউভি ওই গাড়ির মূল্য এক কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে জুনাইদ আহ্মেদ দাখিল করা হলফনামায় নিজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৮ টাকার। তখন তাঁর স্ত্রীর মোট সম্পদ ছিল ২ কোটি ৫৩ লাখ ৮ হাজার ৪৬ টাকার। অর্থাৎ তাঁর নিজের চেয়ে দ্বিগুণ।
জুনাইদ আহ্মেদ এবার তাঁর দায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৬১ টাকা। মধুমতি ব্যাংক থেকে গাড়ি কেনার জন্য তিনি এই ঋণ নিয়েছিলেন। জুনাইদের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলা ছিল। ২০০৭, ২০১১ ও ২০১২ সালে তিনটি মামলা থেকে পর্যায়ক্রমে অব্যাহতি পান। এখন কোনো মামলা নেই।