প্রায় ১০ বছর আগে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে। পরিবার ও ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কেউ জানে না তাঁর খবর। আসলে তিনি কেমন আছেন, কতটা সুস্থ, কথা বলতে পারেন কি না, কিছুই জানার উপায় নেই। অথচ সেই মাইকেল শুমাখারেরই একটি ‘সাক্ষাৎকার’ প্রকাশিত হলো জার্মানির সাপ্তাহিক সাময়িকী ডি আকতুয়েলাতে। কাল্পনিক সেই সাক্ষাৎকার ছেপে এখন বরখাস্ত হয়েছেন ডি আকতুয়েলার প্রধান সম্পাদক অ্যান হফম্যান।
আড়ালে থাকা মাইকেল শুমাখারের ‘সাক্ষাৎকার’ নিয়ে বিতর্ক
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের আল্পস পর্বতমালায় ছেলেকে স্কি করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন শুমাখার। মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে কোমায় চলে যান সাতবারের এই ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন। হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে শুমাখারের শারীরিক অবস্থা নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রেখেছে তাঁর পরিবার। ফেরারি কিংবদন্তিকে তাই জনসমক্ষে দেখা যায় না। জার্মান ও ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যম বরাবরই তাঁর পরিবারের এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে এসেছে।
কিন্তু ঝামেলাটা বাধিয়েছে জার্মানির সাপ্তাহিক সাময়িকী ডি আকতুয়েলা। ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত সাময়িকীটির বিশেষ এক সংস্করণে প্রচ্ছদে শুমাখারের হাসিমুখের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘মাইকেল শুমাখার, প্রথম সাক্ষাৎকার।’ আর প্রচ্ছদের সাব-হেডিংয়ে লেখা, ‘সত্যি বলে ধোঁকা খেতে পারেন’। ভেতরে শুমাখারের দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। আসলে শুমাখার ওই সাক্ষাৎকার দেননি। শুমাখারের হয়ে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।
এ সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর সাময়িকীটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয় শুমাখারের পরিবার। শুমাখার–ভক্তরাও ব্যাপারটা ভালোভাবে নেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় ডি আকতুয়েলার। এরই জের ধরে গত পরশু ডি আকতুয়েলার প্রধান সম্পাদক অ্যান হফম্যানকে বরখাস্ত করে সাময়িকীটির মালিকপক্ষ ফাঙ্কি মিডিয়া গ্রুপ।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফাঙ্কি ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিয়াঙ্কা পোহলম্যান বলেন, ‘রুচিহীন ও বিভ্রান্তিকর এ লেখা কখনোই প্রকাশ করা উচিত ছিল না। এটি কোনোভাবেই সাংবাদিকতার সেই মানদণ্ড পূরণ করে না, যা আমরা এবং আমাদের পাঠকেরা ফাঙ্কির মতো একটি প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে আশা করি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘লেখাটি প্রকাশের পরিণতি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে। ডি আকতুয়েলার প্রধান সম্পাদক অ্যান হফম্যান, যিনি ২০০৯ সাল থেকে কাগজটির দায়িত্বে আছেন, আজ থেকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’