চলতি বছর সংগীতে একুশে পদক পেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। এবারের একুশে পদক যেদিন ঘোষিত হয়, সেদিন গীতিকবি ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় শুভ্র দেবের উচিত এই প্রসঙ্গে কথা বলা। নিজে পদক না গ্রহণ করে সত্যিকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি এখনই শুরু হোক।’
সেদিন প্রিন্স মাহমুদের কথার উত্তর না দিলেও দুদিন আগে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন শুভ্র দেব। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা তো আমার লেভেলের (সমসাময়িক) না। তিনি (প্রিন্স মাহমুদ) তো আমার গানের জন্য বাসায় এসে বসে থাকতেন। কদিন আগেও তিনি আমাকে গানের জন্য ফোন করেছেন।’
কয়েক দিন ধরে দুজনের বক্তব্য নিয়ে অন্তর্জালে নানা ধরনের বিতর্ক হয়েছে। প্রিন্স মাহমুদের দেওয়া পোস্টটি ছিল এ রকম, ‘দেশের সংগীতে শুভ্র দেবের অবদান আছে কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি অবদান লাকী আখান্দ্, আইয়ুব বাচ্চু, ফুয়াদ নাসের বাবু, নকীব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, হামিন আহমেদ, মাকসুদুল হক, মাহফুজ আনাম জেমস এবং প্রিয় গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরী ও শহীদ মাহমুদ জঙ্গির। প্রিয় শুভ্র দেবের উচিত এই প্রসঙ্গে কথা বলা। নিজে পদক না গ্রহণ করে সত্যিকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি এখনই শুরু হোক…।’
এমন পোস্ট দেওয়ার কারণে শুভ্র দেব রাগ হতে পারেন মনে করেন প্রিন্স মাহমুদ। তাই তো মন্তব্যের ঘরে প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘শুভ্রদা আমার কাছের মানুষ আমার ওপর রাগ করবেন কিন্তু সত্য বলছি, এই সত্য যদি স্বীকার করেন, তাহলে শিল্পী হিসেবে তাঁর জায়গা অনেক ওপরে থাকবে…। এখানে শুভ্র দেব নামটি উপলক্ষমাত্র, যিনি পদক পাচ্ছেন, তিনি যদি উপলব্ধি করেন তাঁর চেয়ে যোগ্যতর মানুষটি পদকের ক্ষেত্রে বঞ্চিত, তিনি তাঁর কথা বলে যাবেন। সব ক্ষেত্রেই তা হওয়া উচিত। এই চর্চা থাকলে আরও বহু গুণী মানুষ পেতাম আমরা। যা–ই হোক, সত্যিকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি আজ থেকেই, এখনই শুরু হোক…।’
এদিকে প্রিন্স মাহমুদের এমন কথাকে একেবারে আমলে নেননি শুভ্র দেব। তিনি পাল্টা বলেছেন, ‘আজকে যদি সৈয়দ আব্দুল হাদী, রুনা লায়লার মতো শিল্পীরা কিছু বলতেন, তাহলে হয়তো আমি ভাবতাম। জুনিয়ররা অনেকে অনেক কিছু বলে ফেলে, আমি এগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখি। আমার মনে হয়, তিনি কারও ইন্ধনে এমন কথা বলেছেন। নইলে এমন কথা কীভাবে তিনি বলেন!’
প্রিন্স মাহমুদের ফেসবুক পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন শুভ্র দেব। তিনি বলেন, ‘আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যা দিয়েছি, এমনটা খুব কম শিল্পীর কন্ট্রিবিউশন আছে। শুধু গান গাইলেই হয় না। বাংলা গানের শিল্পী হিসেবে আমি প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায়, তখন বাংলাদেশের শিল্পী হিসেবে প্রথম থিম সং করেছি। শুধু তা-ই নয়, দেশের প্রথম পুরুষ শিল্পী হিসেবে বলিউডের মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে আমন্ত্রণ পেয়েছি। এ ছাড়া মাত্র ১২ বছর বয়সে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। মাদার তেরেসাসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছি। বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে তুলতে আমি নিরলস কাজ করেছি। তাই যাঁরা আমার কাজ সম্পর্কে জানেন, তাঁরা বেশির ভাগই আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এই পদক অনেক আগেই আমার পাওয়া উচিত ছিল।’
সম্প্রতি ঘোষিত ‘একুশে পদক ২০২৪’-এর মনোনীত ব্যক্তিদের হাতে আজ মঙ্গলবার পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছর সংগীতে একুশে পদক পেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব।