শিক্ষার্থী নিহতের পর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর

0
46
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে থাকা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ছবি: সংগৃহীত

রংপুরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের পর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে আগুন দিয়েছেন। দোতলা বাড়ির নিচতলায় ভাঙচুর করা হয়।

এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের দোতলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাইরে থাকা উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের গাড়িসহ পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

উপাচার্যের বাসভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল সন্ধ্যা ছয়টায় দিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ভাই, আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। ভিসির বাড়িতে আগুন জ্বলছে। ভেতরে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছি।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এদিকে বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড় ও ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় সাংবাদিকদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সাংবাদিকেরা বিভিন্ন স্থানে ছুটে গেলে শিক্ষার্থীরাও ছুটে গিয়ে হামলা চালান। তাঁদের হামলায় আহত হয়েছেন টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের ক্যামেরাপারসন শাহনেওয়াজ জনি, এটিএন নিউজের শাহরিয়ার মিম, সময় নিউজের তরিকুল ইসলাম, সাংবাদিক রেদওয়ান হিমেল, প্রতিদিনের বার্তার মুহম্মদ রাজিমুজ্জামান। তাঁদের মধ্যে তরিকুলের অবস্থা গুরুতর। এ সময় ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ছিল না।

সন্ধ্যা সাতটার পর উপাচার্যের বাসভবন এলাকা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সরে যান। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল। পরে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়েছে অবরুদ্ধদশা থেকে শিক্ষকদের উদ্ধার করেন। এ সময় রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাইম হাসান খান উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে আগুন দেওয়া হয়েছে। হলের সামনে থাকা একটি গাড়ি ও পাাঁচটি মোটরসাইকেলও আগুন দেওয়া হয়েছে। শহীদ মুক্তার এলাহাী হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের পাঁচটি কক্ষেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ। মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে
পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ। মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে রংপুর শহর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। বেলা দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নেন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ছিলেন পার্ক মোড়ের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ আহত হন।

আহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সদস্য নিহত আবু সাঈদের বন্ধু অঞ্জন রায় বলেন, শরীরে একের পর রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ সময় সংঘর্ষ চলছিল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়।

রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে ২ জন সাংবাদিকসহ ২৬ শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। এর আগে অনেকেই ভর্তি হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন বলে তিনি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.