শিক্ষাজীবনে কোটা নেননি শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস, বিসিএসে পেলেন প্রশাসন ক্যাডার

0
20
৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল, ছবি: সংগৃহীত

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে নিজের পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল। অন্য সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেয়ে আনন্দিত শিক্ষাজীবনে কখনো শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা না নেওয়া উল্লাস।

উল্লাস পাল বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরিক্ষেত্রে স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এত দূর এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও কোটা নিইনি। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকেছি।’

উল্লাস পালের হাত ও পা বাঁকা। ডান হাতে কোনো শক্তি পান না। তাই লিখতে সমস্যা হয়। পা বাঁকা হওয়ায় হাঁটতেও সমস্যা হয়। তিনি বলেন, ‘শারীরিক বাধা সত্ত্বেও কখনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার কথা চিন্তাও করিনি। মানসিকভাবে নিজেকে অন্য আর দশজনের মতো সুস্থ মনে করি।’

জন্মের পর শিশুরা যে বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে হাঁটা শেখে, উল্লাস পাল সেভাবে হাঁটতে পারতেন না। জন্মগতভাবেই তাঁর দুই হাত–পা বাঁকা। তবে মা-বাবা তাঁর চিকিৎসার কমতি রাখেননি। চিকিৎসার জন্য ভারতেও নেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

উল্লাস পাল বলেন, ‘চিকিৎসকদের শত চেষ্টার পরও হাত-পা স্বাভাবিক হয়নি। তবে দেরিতে হাঁটতে শিখেছি। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। বাড়ির পাশেই কার্তিকপুর পালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাইনি।’

 ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল
৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের কার্তিকপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ ও ঢাকার নর্দান কলেজ বাংলাদেশ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পান উল্লাস। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৪৬৩তম হয়েছিলেন।

উল্লাস বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার অপশন ছিল। কিন্তু আমি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারব। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় টিকেছিলাম।’

৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে শরীয়তপুরের নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত উল্লাস পাল। ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদ পেয়েছিলেন। তবে ৪০তম বিসিএসে পাস করলেও ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কোনো পদেই সুপারিশ পাননি। ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে তাঁকে শুনতে হয়েছিল নেতিবাচক প্রশ্ন।

৪০তম বিসিএসে উল্লাস পালের প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন ক্যাডার। মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে একজন পরীক্ষক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। আপনার যেহেতু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাই এসব কাজ করতে পারবেন বলে মনে হয়?’ এমন প্রশ্ন শুনে উল্লাস পালের মনে হয়েছিল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে তিনি মনে হয় তাঁর পছন্দের ক্যাডার প্রশাসন পাননি।

৪৪তম বিসিএসে এসে অবশেষে প্রথম পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার পেলেন উল্লাস পাল। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে পরীক্ষকেরা তাঁর প্রতি অনেক আন্তরিক ছিলেন। তাঁকে খুব উৎসাহিত করেছিলেন।

উল্লাস পাল বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ওপর কারও হাত নেই। কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নেতিবাচক কথা বলে তাঁর মনোবল ছোট করা ঠিক নয়। আমরাও চাই আমাদের সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে বিকশিত হতে, আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.