উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসি) কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ‘সহকারী ইন্সট্রাক্টর’ পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার একটি প্রস্তাব প্রাথমিকের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। অথচ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের তুলনায় শিক্ষকরা কয়েক গ্রেড ওপরে। ফলে এটা কী করে সম্ভব, সেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকরা।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত চিঠিতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার একটি প্রস্তাব করা হয়। চিঠিটি গতকাল রোববার ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ বিষয়ে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, ইউআরসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা ‘নন একাডেমিক পদধারী’ হিসেবে কোনোভাবেই ‘একাডেমিক ট্রেইনার’ ও ‘একাডেমিক সুপারভাইজারে’র কোনো পদে চলতি দায়িত্ব বা পদোন্নতি পেতে পারেন না। শিক্ষকরা এ উদ্যোগের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা বলেন, ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আইডিয়াল প্রকল্পের অধীনে ১৬তম গ্রেডের একটি পদ। তাঁদের পদোন্নতি হোক, গ্রেড বাড়ুক, এতে আমাদের (শিক্ষকদের) কোনো আপত্তি নেই। তবে আগে বুঝতে হবে, সহকারী ইন্সট্রাক্টরদের কাজ কী? অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। বিদ্যালয় পরিদর্শন করে সরকারকে ফিডব্যাক দেওয়া। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকের গ্রেড ১৩তম। আর পরিপত্র অনুযায়ী ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের পদ ১৬তম গ্রেডের। ১৬তম গ্রেডের একজন কর্মচারী তাঁর ঊর্ধ্বতন ১৩তম ও ১১তম গ্রেডকে টপকিয়ে দশম গ্রেড কীভাবে পাবেন, তা বুঝতে পারছি না।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির কো-চেয়ারম্যান ও খুলনা বিভাগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউআরসিগুলোতে সাধারণত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বস্তুত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদগুলো একাডেমিক সুপারভাইজারের পদ। এসব পদধারী সাধারণত বিএড, এমএড ডিগ্রিধারী হয়ে থাকেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী ইন্সট্রাক্টররা একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে প্রধানত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদান, প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ তত্ত্বাবধান করে থাকেন। ইউআরসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নন একাডেমিক পদধারী হিসেবে কোনোভাবেই একাডেমিক ট্রেইনার ও একাডেমিক সুপারভাইজারের কোনো পদে এভাবে চলতি দায়িত্ব বা পদোন্নতি পেতে পারেন না।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির পদ এবং সমপদ বা সমপদমর্যাদার। সারাদেশে বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদ শূন্য রয়েছে। তা ছাড়া সংশোধিত ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা, ২০২১’ জারি হতে বিলম্ব হওয়ায় নতুন নিয়োগে জটিলতা রয়েছে। তাই ইউআরসিগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি না দিয়ে তাদের পাশ কাটিয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া মানে হলো সারাদেশের প্রাথমিকের প্রায় চার লাখ শিক্ষককে অপমান বা অমর্যাদা করার শামিল।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের পদোন্নতির প্রস্তাব দিলেও মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ইউআরসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে– এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়নি। ফেসবুকে তো কত কিছুই ছড়ানো হয়, রটানো হয়। এ নিয়ে আর কী বলব!