কোথা থেকে শুরু করবেন, কীভাবে শিখবেন—কিছুই জানতেন না। ২০১৯ সালে হঠাৎই পেলেন নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটের খোঁজ। এই ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতাও এক গারো তরুণ। নাম সুবীর নকরেক। দিনা সিদ্ধান্ত নেন, শুরুটা এখান থেকেই করবেন। তাঁর ধারণা ছিল, ফ্রিল্যান্সিং মানেই গ্রাফিকস ডিজাইন। কিন্তু নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে তখন গ্রাফিকস ডিজাইনের ব্যাচে কোনো আসন খালি ছিল না। অগত্যা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন দিনা। ধীরে ধীরে এ বিষয়ই তাঁর ভালো লেগে যায়। দিনা বলছিলেন, ‘আমার জন্য সময়টা খুব কঠিন ছিল। ভালো করে কম্পিউটার চালাতেও জানতাম না। সব একটু একটু করে শিখতে হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য একটা ভালো মানের কম্পিউটার দরকার ছিল। কিন্তু আমার অত সামর্থ্য ছিল না। পরে টাকা ধার করে একটা কম্পিউটার কিনি।’
কোর্স শেষ করার এক সপ্তাহের মধ্যেই অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভারে প্রথম কাজ পেয়ে যান দিনা, ‘প্রথম কাজটা ছিল খুব ছোট—একটা ফেসবুক পেজ চালু করা। মাত্র ১০ ডলারের কাজ। সেটাই খুব যত্ন নিয়ে করেছি। ক্লায়েন্ট খুব খুশি হয়েছিল। আস্তে আস্তে আমার কাছে আরও কাজ আসতে শুরু করে। ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে কাজ করতে শুরু করি। এখন আমার ১২ জনের একটা দল আছে। ওদের নিয়েই কাজ করি।’
মাসে এখন প্রায় তিন হাজার ডলার আয় করেন দিনা মৃ। পাশাপাশি নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবেও কাজ করেন। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তো বটেই, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নাইজেরিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ নানা দেশের প্রতিষ্ঠানের কাজ তিনি করেছেন।
করোনাকালে খুব কঠিন একটা সময় গেছে। সে কথাও বলছিলেন দিনা, ‘প্রত্যন্ত গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উন্নত মানের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। তার ওপর ভিনদেশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আমাদের সময়ের পার্থক্য আছে। ওখানে যখন দিন, আমাদের এখানে রাত বাজে তিনটা। সব সামাল দিয়েই কাজ করতে হয়েছে। আমার স্বামী শুরু থেকেই আমাকে সাহায্য করেছে। এদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান। ও যখন দেখে আমি ক্লায়েন্টের কাজে ব্যস্ত, তখন ও-ই বলে, “তুমি কাজ করো। বাকি সব আমি দেখছি।” সময় পেলে সে-ও এখন ফ্রিল্যান্সিং করে।’
গত বছর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের হাত থেকে ফ্রিল্যান্সিং অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ল্যাপটপ পেয়েছেন এই গারো তরুণী। এটা তাঁর কাছে একটা বড় অর্জন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দিন দিন যোগাযোগ বাড়ছে। বাড়ছে আয়। প্রতিনিয়ত শিখছেন, শেখাচ্ছেন। ধীরে ধীরে আরও বড় হচ্ছে তাঁর দল। ভবিষ্যতে নিজের একটা এজেন্সি চালু করতে চান দিনা। সেই লক্ষ্যেই দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।