শারমিন থেকে জিবরান হওয়া সেই তরুণ রেলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন

0
179
শারমিন আক্তার ঝিনুক এখন জিবরান সওদাগর

শারমিন আক্তার ঝিনুক ওরফে জিবরান সওদাগরকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ফিটার গ্রেড–২ পদে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁর নিয়োগে এখন আর কোনো জটিলতা রইল না।

আজ বুধবার বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পার্সোনেল-৩ শাখার উপপরিচালক পলাশ কুমার সাহার সই করা চিঠিতে জিবরানকে চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুমতির কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শারমিন আক্তার ঝিনুককে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী কাজে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হলো। তাঁর কর্মস্থলে অনুপস্থিতকালের বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

গতকাল মঙ্গলবার অনলাইনে ‘নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন তিনি, এখন জটিলতা বাংলাদেশ রেলওয়ের চাকরিতে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিম) মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, শারমিন আক্তার ঝিনুককে সৈয়দপুরে যোগদানের জন্য রেল ভবন অনুমোদন দিয়েছে। এখন তিনি যেকোনো সময় কাজে যোগ দিতে পারবেন। তবে তিনি দীর্ঘদিন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে ছিলেন, সে বিষয়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শারমিন আক্তার ঝিনুক ওরফে ঝিনুক সওদাগর নামের মেয়েটির বর্তমান নাম জিবরান সওদাগর। অস্ত্রোপচার করে ৩০ বছর বয়সী ঝিনুক এখন একজন পুরুষ। দেশের ও ভারতের চিকিৎসকদের চিকিৎসাপত্রে লেখা আছে, জিবরান সওদাগর জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত। ২০২০ সালে তিনি পুরুষে রূপান্তরের চিকিৎসার বিভিন্ন ধাপ শুরু করেন।

গত সোমবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে জিবরান বলেন, ২০২১ সালে তিনি ভারত থেকে স্তন ও জরায়ু কেটে ফেলা, পুরুষাঙ্গ পুনঃস্থাপনসহ মোট তিনটি বড় অস্ত্রোপচার করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। চাকরির কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন নথিতে জিবরান এখনো শারমিন আক্তার ঝিনুক নামেই আছেন।

অস্ত্রোপচারের আগে জিবরান বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর ক্যারেজে ফিটার গ্রেড-২ পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শারমিন আক্তার ঝিনুক নামে ২০১২ সালে ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। বর্তমানে নারী থেকে পুরুষ হওয়ার পর সেই নামেই চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জটিলতা শুরু হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ছিলেন।

জিবরান জানান, চিকিৎসকের সনদসহ আবেদন করার পর রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শারমিন আক্তার ঝিনুককে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তিনি দায়িত্ব পালনের জন্য ঠিক আছেন বা ফিটনেস সনদ দেন। কিন্তু এরপরও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন টালবাহানা করছিল।

এর আগে জিবরানের নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে রোববার দেখা করেছিলেন ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী হো চি মিন ইসলাম।

জিবরানের বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি স্নাতক তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে আর পড়েননি। পারিবারিকভাবে তাঁরা সচ্ছল। পৈতৃক বাড়ি ও ব্যবসা আছে। তাঁর বাবা মারা গেছেন ২০১৪ সালে। বাবা দুই বিয়ে করেছিলেন। দুই মায়ের ঘরে তাঁরা ১২ ভাইবোন। আগে ৯ বোন ছিলেন, এখন তিনি পুরুষ হওয়ার পর ৮ বোন।

জিবরান জানান, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের পুরো প্রক্রিয়ায় তিনি তাঁর পরিবারের সহায়তা পেয়েছেন। জিবরান মহিলা প্রিমিয়ার ফার্স্ট ডিভিশন, জাতীয় লিগে খেলেছেন। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে ডিস্ট্রিক্ট টুর্নামেন্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে খেলেছেন। রেলওয়ের ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন।

চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুমতি পেয়ে জিবরান বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এত দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাবে তা কল্পনাতেও ছিল না।

তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যম ও ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী হো চি মিন ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.