শহর যেন যুদ্ধক্ষেত্র, ডানে-বাঁয়ে শুধু বিস্ফোরণের শব্দ

দাবানলে পুড়ছে হাওয়াই

0
193
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে হাওয়াই অঙ্গরাজ্য পুড়ছে ভয়াবহ দাবানলে, ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে হাওয়াই অঙ্গরাজ্য পুড়ছে দাবানলে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। দাবানলে অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপের লাহানিয়া শহরে অন্তত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু। আগুন নেভাতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনীর সদস্যরা।

আগুনের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার দিনের শুরুর দিকে। গতকাল বুধবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুনে মাউই দ্বীপে দুই হাজার একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। এতে বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে স্থানীয় ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। দ্বীপটিতে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত লাহানিয়ায় ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

হাওয়াইয়ের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অঙ্গরাজ্যটিতে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডোরা’র কারণে আবার বয়ে যাচ্ছে দমকা বাতাস। ফলে আগুন আরও ভয়াবহ হয়েছে। এর জেরে বুধবার রাত পর্যন্ত হাওয়াইয়ের অনেক অঞ্চলে দাবানলের উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। লাহানিয়া শহর ছাড়াও মাউই দ্বীপে বেশ কয়েকটি এলাকা দাবানলে জ্বলছে।

১২ হাজার বাসিন্দার লাহানিয়া শহরটি ঐতিহাসিক। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রও এটি। শহরের গভর্নর জোশ গ্রিন জানিয়েছেন, আগুনে লাহানিয়ার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। শত শত পরিবারকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আরেক সরকারি কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহরটিতে ২৭০টির বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দাবানল থেকে বাঁচতে পর্যটকদের দ্রুত মাউই দ্বীপ ছাড়তে বলেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বাসে করে তাঁদের হোটেল থেকে স্থানীয় কাহুলুই বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে দেখা গেছে। তবে আগুনের কারণে অনেক ফ্লাইট বিলম্ব হয়েছে। কিছু ফ্লাইট বাতিলও করা হয়েছে। ফলে বিমানবন্দরে অনেক পর্যটককে আটকে থাকতে দেখা গেছে।

দাবানলের পর সাগর থেকে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। দেশটির সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কেনেথ হারা বলেছেন, আগুন থেকে বাঁচতে লোকজন পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার বুধবার মাউই দ্বীপে পানি ছিটিয়েছে বলে জানিয়েছেন কেনেথ হারা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে মানুষের জীবন বাঁচানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এরপর মানুষের দুর্দশা লাঘবের ওপর নজর দেওয়া হবে। সবশেষে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।’

এদিকে এক বিবৃতিতে দাবানলে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

‘মনে হচ্ছে যুদ্ধের সিনেমা’

লাহানিয়া শহরের আগুনের বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, লাহানিয়ার কেন্দ্র দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দাবানল। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে শহরের আকাশ। শহরের বাসিন্দা ক্লেয়ারের ভাষ্যমতে, সবকিছু যে ভৌতিক সিনেমার মতো। তিনি বলেন, বাড়ি ছেড়ে পালানোর এক ঘণ্টার কম সময়ে তাঁর এলাকাটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। পথে সড়কের দুই পাশে গাড়িগুলো আগুনে জ্বলছিল। যানজটে মানুষ আটকে পড়েছিল। অনেকেই শহর ছেড়ে যেতে পারেননি। বিশেষ করে গৃহহীন ও যাঁদের গাড়ি নেই তাঁরা বড় ভুক্তভোগী হয়েছেন।

লাহানিয়ার দাবানলকে সিনেমার মতো বলে মনে হয়েছে আরেক বাসিন্দা ক্রিসি লোভিটেরও। তিনি বলেন, ‘লাহানিয়া পোতাশ্রয়ের সব কটি নৌকা আগুনে পুড়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধের সিনেমা। নৌকাগুলো থেকে জ্বালানি তেল পড়ে পানিতেও আগুন ধরে গেছে।’ অ্যালান ব্যারিওস নামের আরেকজন সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘শহরটি যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ডানে–বাঁয়ে শুধু বিস্ফোরণের শব্দ।’

এএফপি

হাওয়াই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.