সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২৫ মার্চ। তখন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তাঁর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন।
যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রথমটি হলো খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
যদিও খালেদা জিয়ার পরিবার এবারও শর্ত শিথিল করে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আবেদন করেছে সরকারের কাছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শর্ত শিথিল করে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এখন অল্প সময়ের মধ্যে আবেদনের ব্যাপারে আইনগত মতামত দেওয়া হবে।
সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকা খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা না–পারার প্রশ্নে সরকারের অন্তত চারজন মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য একই রকম। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার শর্তে যা আছে, তাতে তাঁর রাজনীতি করতে বাধা নেই। কিন্তু সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ—এই তিনজন মনে করেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকায় খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতির করতে পারা না–পারার বিষয়টি হঠাৎই গত জানুয়ারি মাসে সামনে নিয়ে আসেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তিনি দাবি করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা রয়েছে। তখন বিএনপি তাঁর এ বক্তব্য সত্য নয় বলে জানিয়েছিল। শেখ সেলিমও তাঁর দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে হঠাৎ মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্যে শুরু থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিল বিএনপি। দলটির নেতারা এসব বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ২৪ মার্চ শেষ হতে যাচ্ছে। এর আগেই সরকারের দিক থেকে তাঁর রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা।
সরকারের একাধিক সূত্র বলেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের আবেদনের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো বিতর্কের প্রভাব পড়বে না।