বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে দলটির মনোনয়নে সিলেটে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থিতার বিষয়ে ২০ মে জনসভা করে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন। এর ফাঁকে তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাঁর লাভ, নাকি লোকসান হবে। এসব চিন্তাভাবনা শেষেই প্রার্থিতার বিষয়ে আরিফুল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছে না। আরিফুল হক চৌধুরী যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মানুষ, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, তাই তিনি নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তই নেবেন।
ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, ঈদের পর জানাবেন আরিফুল হক চৌধুরী
বিএনপির একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেই প্রার্থিতা ঘোষণার বিষয়ে আরিফুল হক কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি এখন তিনটি বিষয় নিয়ে ভাবছেন। প্রথমত, দলের বিরোধিতা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিএনপির রাজনীতিতে পুনরায় ফিরতে পারবেন কি না। দ্বিতীয়ত, সরকারের তরফ থেকে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা থাকবে কি না। তৃতীয়ত, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আরিফুল–সমর্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা আছে। নির্বাচনে তাঁরা এজেন্টের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না। এতে ৪২টি ওয়ার্ডের মোট ১৯০টি কেন্দ্রে বিশ্বস্ত এজেন্ট পাওয়া দুষ্কর। মূলত, এই তিন হিসাবের সমীকরণ তিনি ইতিবাচকভাবে মেলাতে পারলেই নির্বাচনে যাবেন, নতুবা প্রার্থী হবেন না।
রাজনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, আরিফুল বিএনপির মনোনয়নে মেয়র হয়েছেন। এখন তিনি যদি প্রার্থী হন, তাহলে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই আরিফুল যেন প্রার্থী না হন, সে জন্য বিএনপির ভেতর থেকে তীব্র চাপ আছে। অন্যদিকে, আরিফুল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন—এটা সরকার চাইছে। এতে একদিকে যেমন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির জন্য এটা একটা বিরাট ধাক্কা হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
‘সিদ্ধান্ত নিতে’ লন্ডনে মেয়র আরিফুল, সিলেটে দোটানায় অনুসারীরা
১ মে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজের প্রার্থিতার বিষয় স্পষ্ট না করলেও সিলেটের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। এ সময় তিনি বক্তব্যে বলেন, ২০ মে বেলা আড়াইটায় নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে ৪২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
জনসভা করে সিদ্ধান্ত জানানোর খবর চাউর হতেই আরিফুলের পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। তিনি নির্বাচন করবেন কি না, এ নিয়েও সংশয় দেখা দেয় তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মনে। নগরের রাজনীতিসচেতন একাধিক ব্যক্তি বলছেন, আরিফুল প্রার্থিতার বিষয়ে ‘রহস্য রাখায়’ দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। প্রার্থিতার বিষয়টি ‘এত নাটকীয়ভাবে’ ঘোষণার কী আছে—এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নগরবাসীর চোখ এখন ২০ মের দিকে।
২০ মে আরিফুল নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিন—এমনটা প্রত্যাশা করেন নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী কিম। তিনি বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরী দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অনেক কাজ এখনো বাকি। এই মহানগরের কার্যক্রমের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের একটা সংশ্লিষ্টতা আছে। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচনে আসবেন না—এটা আমি কোনোভাবেই মনে করি না। যেহেতু তিনি সিলেট নগরের মানুষের জন্য কাজ করছেন, তাই মনে করি, অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য সিটি নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হওয়া উচিত।’
আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঈদের পর থেকেই আরিফুল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। বিশেষ করে নগরের বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটারদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন। নগরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর এবং বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে প্রায় সবাই তাঁকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।
একই সূত্র বলেছে, আরিফুল বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় অনেকটা নিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। এ জন্য দলে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বসানোর সম্ভাবনা আছে। তাই নির্বাচন করবেন কি না, সেটা সব বুঝেশুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে, ২০ মের আগে অন্যদের এ বিষয়ে ধারণা করা একটু কঠিন।
যোগাযোগ করলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হব কি না, এ নিয়ে ২০ মের আগে কিছু বলতে চাই না। ওই দিনই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করব।’ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত জানাতে এতটা সময় নেওয়ার কারণ কী, এর জবাবে মেয়র বলেন, ‘৪২টি ওয়ার্ডে আমার কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছি। তাঁদের পরামর্শ নিচ্ছি। তাঁদের পরামর্শের আলোকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনীত মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।