লন্ডনের এক টাওয়ারে থাকা বিশাল কার্যালয় ছেড়ে ছোট ভবনে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক এইচএসবিসি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এইচএসবিসির মতো ব্যাংকের বড় কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা এক নতুন ধারার কথা জানান দেয়। এতে বাণিজ্যিক ভবন ভাড়া দেওয়া-নেওয়ার বাজারে প্রভাব পড়ছে।
গতকাল সোমবার এইচএসবিসি কর্মীদের জানিয়েছে, ক্যানারি ওয়ার্ফের ৪৫ তলার বিশাল কার্যালয় ছেড়ে সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালের কাছে এক অপেক্ষাকৃত ছোট কার্যালয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে।
বিভিন্ন কারণে এইচএসবিসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্ভবত একটি কারণ হচ্ছে কোভিড-১৯–পরবর্তী পর্যায়ে মিশ্র ধরনের কাজের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি, যেমন দূরে বসে কাজ করা বা অফিস এবং বাসা ও কাজের জন্য এই উভয় জায়গাকেই ব্যবহার করা। কর্মীদের কাজের ধরাবাঁধা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার কারণে এইচএসবিসির মতো আরও অনেক কোম্পানি তাদের কার্যালয়ের আয়তন নিয়ে নতুন করে ভাবছে। এখন তারা আরও ব্যয় সাশ্রয়ী কার্যালয় খুঁজছে।
বড় কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার আরেকটি কারণ হলো, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও তারা পরিবেশবান্ধব কার্যালয় খুঁজছে। এই প্রবণতা বেশ ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। সে জন্য বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই প্রবণতার কারণে একসময় শহরের রূপও বদলে যেতে পারে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের লন্ডন রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক টেনি ট্র্যাভার্স রয়টার্সকে বলেন, কর্মীরা ঘর থেকে কাজ করার কারণে এইচএসবিসির মতো প্রতিষ্ঠানের বড় কার্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে।
সিটি অব লন্ডন ও ক্যানারি ওয়ার্ফ লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী আর্থিক কেন্দ্র। সেই ১৯৮০-এর দশক থেকে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। তাদের এলাকায় অফিস ভাড়া নেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলো চেষ্ট করে থাকে। তবে টেনি ট্র্যাভার্স মনে করেন, যারা একসময় এই অঞ্চলের বেশি ভাড়ার কারণে কার্যালয় নিতে চায়নি, এখন বড় কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতার কারণে এখানকার ভাড়া প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে, ফলে সেসব কোম্পানি আবার এখানে ফিরে আসতে পারে।
এদিকে নাইট ফ্রাঙ্ক নামক এক আবাসন এজেন্টের জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স বলছে, বিশ্বের বৃহৎ নিয়োগদাতাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক কোম্পানি আগামী তিন বছরের মধ্যে কার্যালয়ের আকার ছোট করে ফেলতে চায়।
বড় বড় কোম্পানির এভাবে কার্যালয়ের আয়তন কমিয়ে ফেলার কারণে বৃহত্তর বাজারে প্রভাব পড়েছে।
আরেকটি এক আইনি ফার্মের জরিপের ফলাফল উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইউরোপের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত খাত ছিল আবাসন। এই খাতের সম্পদ মূল্য কমছে; সেই সঙ্গে তাদের তারল্য ও বিনিয়োগও কমেছে।
সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে সুইডেন—দেশটির সম্পদ ও বিনিয়োগের বড় একটি অংশ সম্পত্তির সঙ্গে বাঁধা। সে কারণে বাজারে কোনো ধরনের পরিবর্তন এলে বিনিয়োগকারীরা বিপদে পড়েন। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবে ঋণ বৃদ্ধি ও দুর্বল অর্থনীতির কারণে দেশটির আবাসন খাতের জন্য চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে পারিবারিক চাপ তৈরি হয়েছে।
তবে কার্যালয়ের আয়তন কমানোর ক্ষেত্রে এইচএসবিসি সবচেয়ে আগ্রাসী। তারা এখন নতুন যে কার্যালয়ে যাচ্ছে, তার আয়তন ৫ লাখ ৫৬ হাজার বর্গফুট, আর এখন যে স্কোয়াড টাওয়ারে আছে তার আয়তন ১১ লাখ বর্গফুট।