লক্ষ্মীপুরে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৪০) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে (৩৫) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে নিহত নোমানের ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদীকে। এ ছাড়া মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চন্দ্রগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক বেলায়েত হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, মঙ্গলবার রাতে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান পোদ্দারবাজারে ছিলেন। ওই সময় তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যদের বিদায় দিয়ে তিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাকিব ইমামকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে নাগেরহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। নাগেরহাটের কাছাকাছি পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে মাটিতে পড়ে যান। তখন নোমানকে ও রাকিবকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে দুজনেই মারা যান।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পূর্বশত্রুতা বা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবুল কাশেম জিহাদী গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। আর তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন মাহফুজুর রহমান। ওই নির্বাচন নিয়েই কাশেম ও তাঁর বাহিনীর সঙ্গে মাহফুজ-নোমান পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছিল।
লক্ষ্মীপুরে গুলিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহতের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, গ্রেপ্তারও নেই
পরিবার ও স্বজনদের ভাষ্য, ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে ৫ এপ্রিল সৌদি আরবে যান যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। ২০ এপ্রিল দেশে ফেরেন তিনি। দুই দিন ঢাকার বাসায় থেকে ঈদের দিন ২২ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে আসেন নোমান। গ্রামে আসার পরই সন্ত্রাসীরা তাঁকে টার্গেট করে। তিন দিনের মাথায় অনেকটা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হলো আবদুল্লাহ আল নোমানকে। তাঁর সঙ্গে থাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাকিব ইমামকেও। আবদুল্লাহ আল নোমান প্রস্তাবিত জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। রাকিব ইমাম বশিকপুর নন্দীগ্রামের রফিক উল্যার ছেলে।
নিহত নোমানের ভাই বশিকপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে দায়ী করেছেন। মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদী পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। কাশেম আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা (ইউপি নির্বাচনে) করেও হেরেছিল। এরপর থেকে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। টার্গেট করে নোমান-রাকিবকে তারা খুন করেছে।’
লক্ষ্মীপুরে গুলির ঘটনায় আরও একজন নিহত
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য আবুল কাশেম জিহাদীর মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলে তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আলাউদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদীর চাচাতো ভাই এবং জিহাদী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। জিহাদীর হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন আলাউদ্দিন। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য আবুল কাশেম জিহাদী যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে দায়ী করেছেন। যদিও পরবর্তী সময়ে হত্যা মামলায় তাঁকে (নোমানকে) আসামি করা হয়নি।