লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-ভাঙচুর ও কৃষকদল নেতা সজিব হোসেন নিহতের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে সদর মডেল থানায় এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়। এতে জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ ৩ হাজার ৫৫৫জনকে আসামি করা হয়।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা দুই মামলায় এ্যানিকে প্রধান আসামী করে ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে বিশৃঙখলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে কৃষক দলের কর্মী সজীব হোসেন হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই সুজন হোসেন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অন্য মামলার বাদী নুরুল আমিন। তাঁর বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন তিনি।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির উত্তেজিত নেতাকর্মীরা পথযাত্রার নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। পুলিশের ওপরে হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২মামলায় বাদী পুলিশ। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসুচি ঘিরে গত মঙ্গলবার পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে মো. সজীব হোসেন (৩০) নামের কৃষক দলের এক কর্মী নিহত হন। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানাসহ উভয় পক্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে শহরের গোডাউন রোড এলাকায় বিএনপির নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর বাসভবন থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। পদযাত্রাটি রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের কাছে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা, রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতাল, মটকা মসজিদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আসামী বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির শান্তিপুর্ণ পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ হামলা করে শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। এখন উল্টো হয়রানি করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠূ তদন্তের দাবি জানান তিনি।
এদিকে কৃষক দলের নেতা সজিব হোসেন হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেন তিনি জানান, লাশ উদ্ধার হওয়া জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সজিব আহত অবস্থায় ফিরোজা টাওয়ার নামের একটি বাসায় ঢোকেন। মৃত্যুর আগে সেখানকার এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কথা হয়। সজিব ওই ব্যক্তিকে বলেছেন, তিনি বিএনপির কর্মসুচিতে আসেননি। চার-পাঁচজন লোক তাঁকে কুপিয়েছে। তাঁর কাছে তাঁরা টাকা পান। এরপর সজিব আর কোনো কথা বলতে পারেন নি।