রুবেল-বরকত অর্থপাচার মামলা: নতুন ৩৭ আসামি যারা

0
175
সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল

আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ নতুন করে ৩৭ জনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। সম্পূরক অভিযোগপত্রে,  এই ৩৭ জনসহ মোট ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি। ৫ জুলাই এটি সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের পেশকার সাইফুল ইসলাম মিঠু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২২ জুন মামলার তদন্তকারী সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ৪৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে এ সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। এর আগের অভিযোগপত্রে বরকত, রুবেলসহ ১০ জন আসামি ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামি বরকত, রুবেলসহ অন্যদের স্বীকারোক্তিতে যেসব আসামির নাম উঠে এসেছে, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছে সিআইডি। কার হিসাবে কত টাকা লেনদেন, আয়ের উৎস, কত টাকা কীভাবে অর্থপাচার করা হয়েছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে অধিকতর অভিযোগপত্রে।

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম বাবর, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) সত্যজিৎ মুখার্জি, খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, আসিফুর রহমান, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাইয়াজ বিন ওয়াজেদ, কামরুল হাসান ডেভিড, মোহাম্মদ আলী, তরিকুল ইসলাম, নিশান মাহমুদ, বিল্লাল হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, অনিমেষ রায়, সামছুল আলম চৌধুরী, দীপক মজুমদার, শেখ মাহতাব আলী মেথু, সফিকুল ইসলাম, ফকির মো. বেলায়েত, গোলাম মোহাম্মদ নাসির, জামাল আহমেদ খান, বেলায়েত মোল্লা, আহসান হোসেন খান, অমিতাভ বোস, চৌধুরী  মো. হাসান, জাফর ইকবাল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা পারভীন,  রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ, সাহেব সরোয়ার, সাজ্জাদ হোসেন, স্বপন কুমার পাল, জাহিদ ব্যাপারী, খলিফা কামাল, নাফিজুল, রিয়াজ আহমদ, আনোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান, মাহফুজুর রহমান, সুমন সাহা, আবদুল জলিল শেখ, রফিক মণ্ডল, আফজাল হোসেন খান, খন্দকার শাহিন আহমেদ ও আরিফুর রহমান (দোলন)।

এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আসামি সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী ও আশিকুর ফারহান। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা তাদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের মালিকানাধীন ৫৫টি বাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়িও জব্দের আদেশ দেন আদালত।
জানা গেছে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাহিদুর রহমান খোকন রাজাকার বরকত-রুবেলের আপন মামা। অপর পলাতক যুদ্ধাপরাধী সালথার বড়খাড়দিয়া গ্রামের আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার তাদের আপন খালু। এছাড়া ফরিদপুর জেলার ফ্রিডমপার্টির এক সময়ের ডাকসাইটের নেতা বাদশা মন্ডল এই দুই ভায়ের আপন চাচা।
২০২০ সালের ২৬ জুন অবৈধ উপায়ে দুই হাজার কোটি টাকা আয় ও পাচারের অভিযোগে বরকত ও তার ভাই রুবেলকে প্রধান আসামি করে ঢাকার কাফরুল থানায় মামলা করে সিআইডি। ২০১২ সালের অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন সংশোধনী (২০১৫) এর ৪ (২) ধারায় এ মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন সাজ্জাদ ও ইমতিয়াজ। এছাড়া মাদক বেচাকেনা, ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন তারা। এসি, নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার, পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। এ অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন তারা।
প্রথম জীবনে এই দুই ভাই রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এক বিএনপি নেতার ফাইফরমাশ খাটতেন। তখন তাদের সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই দুই ভাই অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.