বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে লিথিয়াম ভিত্তিক ব্যাটারির। এর মূল সুবিধা, এটি বারবার রিচার্জ করা যায়। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক গাড়ি সহ অনেক ডিভাইসেই রয়েছে এই ব্যয়বহুল প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে, এবার দারুণ এক বিকল্প উদ্ভাবিত হয়েছে দামি এই পণ্যটির।
সম্প্রতি নতুন এক সোডিয়াম ভিত্তিক ব্যাটারি (এসআইবি) উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন ভারতের একদল বিজ্ঞানী, যা খুবই দ্রুত রিচার্জ করা যায়। ন্যাসিকন টাইপের ক্যাথোড ও অ্যানোড উপাদানের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ব্যাটারি মাত্র ৬ মিনিটে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করতে পারে। এ ধরনের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করে একটি ডিভাইস কমপক্ষে তিন হাজার বার চার্জ দেওয়া সম্ভব।
প্রকৃতপক্ষে, প্রচলিত সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারিগুলো ধীর গতির চার্জ ও স্বল্প আয়ুর জন্য খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। এ কারণে অপেক্ষাকৃত খরুচে হলেও লিথিয়াম আয়নের ব্যাটারির জনপ্রিয়তা বেশি।
তবে, ভারতের নতুন এই ব্যাটারি এ দিক দিয়ে অনেকটাই উন্নত। রসায়ন এবং ন্যানো প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই ব্যাটারি তৈরীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চের (জেএনসিএএসআর) বিজ্ঞানীরা । গবেষক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন বিজ্ঞানী ও জেএনসিএসআরের সহযোগী অধ্যাপক প্রেমকুমার সেনগুট্টুভান ও পিএইচডি গবেষক বিপ্লব পাত্র।
ব্যাটারির উপকরণ হিসেবে গবেষক দলটি একটি ন্যাসিকন জটিল যৌগ তৈরি করেন এবং একে তিনটি উপায়ে উন্নত করেছেন। এগুলো হল: কণাগুলোকে ন্যানোস্কেলে সংকুচিত করা, পাতলা কার্বনের আবরণে মোড়ানো ও অল্প পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম উপাদান যোগ করে অ্যানোড উপাদানের গুণগত মান বাড়ানো।
এই পরিবর্তনের ফলে সোডিয়ামের আয়নগুলো দ্রুত ও আরও সুরক্ষিত অবস্থায় চলাফেরা করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে, ব্যাটারি চার্জের গতি ও এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়েছে।
ভারতে লিথিয়াম একটি দুর্লভ উপকরণ। মূলত আমদানি করেই এর চাহিদা মেটানো হয়। সে তুলনায় সোডিয়াম অনেকটাই সস্তা ও সহজলভ্য। খরচ কমানোর পাশাপাশি এই ব্যাটারি ইলেকট্রিক গাড়ি, সৌরবিদ্যুতে পরিচালিত গ্রিড, ড্রোন ও পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের সহজলভ্য উৎসে পরিণত হতে পারে।
নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি উচ্চ পর্যায়ের মানদণ্ড, যেমন ইলেকট্রোকেমিক্যাল সাইক্লিং ও কোয়ান্টাম সিমুলেশনের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি প্রাথমিক ছাড়পত্রও পেয়েছে। তবে, ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনো বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য এই ব্যাটারি বাজারে আনার সময় হয়নি। বাজারে আনার আগে এর আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।